লেখক: ইমরান বিন সুলতান
পর্ব : ১
ফজরের আযান মিনারের চূড়া থেকে ধ্বনিত হচ্ছে, আকাশজুড়ে প্রতিধ্বনিত সেই পবিত্র ডাক। নাঈম এখনো দু’হাত তুলে প্রভুর দরবারে মোনাজাতে ডুবে আছে—চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুধারা, যেন কোনো নিষ্পাপ শিশুর কান্না। পুরোনো পাপের ভার বুক থেকে ঝরে পড়ছে যেন প্রতিটি চোখের জলের ফোঁটার সঙ্গে।
ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে মা ইসরাত বেগম চুপচাপ ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাঁর হৃদয়জুড়ে আজ এক অপার্থিব প্রশান্তি। তিনি মনে মনে বলছেন,
“হে পরওয়ারদিগার! এতদিন পর আমার চোখের পানি কি তবে তুমি কবুল করলে?”
আশ্বস্ত হয়ে তিনি সন্তর্পণে কাছে গিয়ে নাঈমের পিঠে স্নেহভরে হাত রাখলেন। তাঁর কণ্ঠে মাতৃস্নেহ মাখা কোমলতা—
মা ইসরাত বেগম:
“বাবা, এবার মোনাজাত শেষ করো। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। এখন মসজিদে যাওয়ার সময়।”
নাঈম:
“আচ্ছা মা, যাচ্ছি। তুমি বাবাকে ডেকে দাও, একসাথে যাবো।”
নাঈম ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এল। বাড়ির সামনের খোলা উঠোনে দাঁড়িয়ে গভীরভাবে চারপাশের প্রকৃতি দেখছে। মনে মনে ভাবছে—
“আহ্, এই ভোরবেলা... আকাশটা কত সুন্দর! কী নির্মল বাতাস, যেন জান্নাতের সুবাস ভেসে আসছে। কেন যে আগে এসব উপলব্ধি করতে পারিনি! যদি করতে পারতাম, তবে হয়তো আমার জীবনটা এতটা ভুলের আবরণে ঢেকে যেত না।”
ঠিক তখনই পেছন থেকে ভেসে এল পরিচিত কণ্ঠ—
রাহাত সাহেব (নাঈমের বাবা):
“চলো নাঈম, মসজিদের দিকে। আজ একটু দেরি হয়ে গেল।”
বাবা-ছেলে পাশাপাশি হাঁটছে গ্রামের একমাত্র পুরনো মসজিদের দিকে। রাস্তাটা নিঃশব্দ, তবে বাতাসে এক প্রশান্তিময়তা। মসজিদের বারান্দায় পৌঁছে দেখে, নামাজ শুরু হয়ে গেছে। গ্রামের মসজিদে লোকজন সাধারণত কমই আসে—একজন মোয়াজ্জিন আর একজন তরুণ ইমাম। এই ইমামই নাঈমের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন।
নামাজ শেষে এখনো আকাশে ভালোভাবে আলো ফোটেনি, অন্ধকার আবছা করে রেখেছে চারপাশ। বাবা-ছেলে নামাজ শেষে বাড়ির দিকে হাঁটছে, পায়ের শব্দে ভোরের নিস্তব্ধতা খানিকটা ভাঙছে। ঠিক তখনই, পিছন থেকে আচমকা এক রহস্যময় ছায়া নাঈমের বাবার মাথায় আঘাত করে।
ঘটনাটা মুহূর্তেই বদলে দিল পরিবেশ। বাতাস যেন থমকে গেল, পাখিরা চুপ করে গেল। ভোরের আলো আর শান্তির আবেশ ভেদ করে এলো এক অনাহুত অন্ধকার।
চলবে......
যোগাযোগ
বার্তা বিভাগঃ 01788-729304, 01883-306048
ই-মেইল: shadhinsurjodoy@gmail.com
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | স্বাধীন সূর্যোদয় | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।