মহিবুল্লাহ মহিব , বিশেষ প্রতিনিধিঃ
তালা হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রাজিব সরদারের অনিয়ম, দুর্নীতি খামখেয়ালিপনার কারণে সরকারি স্বাস্থ্য সেবার মান একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে।
সম্প্রতি সরকারের ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যায়ে ওষুধ ও মালামাল সরবরাহে ব্যাপক গোঁজামিল পাওয়া গেছে। হাসপাতাল কর্তা ডাঃ রাজিব সরদার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের উপঢৌকন গ্রহণ কর নিম্ন মানের ঔষধ ও সরঞ্জাম সরবরহ করেছেন। প্রতিটি সরঞ্জামের মুল্য ৩ থেকে ১০ গুন বেশি ধরা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ।
সরেজমিনে হাসপাতাল গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ চেম্বারের ডাক্তার নাই, ঔষধ নাই। জরুরি বিভাগে গজ নেই, ব্যান্ডেজ নেই। আল্ট্রাসনোগ্রাম আছে, টেকনিশিয়ান নেই। নৈশ্য প্রহরী জরুরি বিভাগে জরুরি ছেঁড়াফাটা সেলাই ব্যান্ডেজ করছেন, সুইপার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ইঞ্জেকশন , স্যালাইন পুশ করছেন।
নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, এক কালের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আন্ডারওয়ার্ল্ডের ভয়ংকর নেতা ও পরবর্তীতে খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা রঞ্জিত সরদারের ছেলে ডাঃ রাজিব সরদার ২০১৪ সালের ৭ আগষ্ট তালা হাসপাতালে মেডিকেল ডাক্তার হিসাবে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন।
এরপর তিনি পৈত্রিক ও আওয়ামী রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নিয়ম লংঘন করে অনেক সিনিয়র কে টপকিয়ে ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্বভার বাগিয়ে নেন। কিন্তু দেখা গেছে তার দপ্তরে কর্মকর্তা গণের নামের তালিকা বোর্ডের ( ভারপ্রাপ্ত) উঠিয়ে দিয়েছেন। হাসপাতাল প্রধান হওয়ার পর থেকে ভূয়া বিল ভাউচারে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন তিনি । গত বছর একটি প্রজেক্টর ক্রয়ের নামে প্রায় লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।
হাসপাতালে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায় ডাঃ রাজিব অনুপস্থিত, খালি চেয়ার, কিন্তু এসি, ফ্যান চলছে ! পিওন বলছে, ফিল্ডে গেছেন। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, তিনি আদৌও হাসপাতাল এলাকায় প্রবেশ করেন নি।
হাসপাতালের কয়েক জন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা ক্ষুদ্র কর্মচারী, আমাদের যা বলতে বলা হয়,তার বাইরে বলতে পারি না। তারা আরও জানান, ডাঃ রাজিব সরদার বিগত বছরের ৫ আগষ্টের পর থেকে ঠিকমতো অফিস করেন না।
তবে তারা মাদক সেবনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মাঝে মধ্যে অসংলগ্ন (মাতাল) অবস্থায় মাঝরাতে চিল্লাচিল্লি করেন এবং ডাঃ কর্মচারীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
একটি সূত্র জানায়, প্রতি জুন মাসে ডাক্তার রাজিব সরদার ভূয়া বিল ভাউচারে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সংগঠক সহ কয়েকজন সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এবিষয়টি নিয়ে ডাঃ রাজিব দপ্তরে গেলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাতে বেশি কথা বলতে চাননি। এরপর থেকে বিগত ১০ দিন যাবৎ এবিষয়ে ডাক্তার রাজিব সরদারের ০১৭১১-৩৬৫২৯৭ মোবাইল নম্বরে বার বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
সাতক্ষীরা জেলা সিভিল সার্জন আব্দুস সালাম জানান, যে কোন দুর্নীতি, অনিয়ম পেলে নিউজ করেন, আমার কাছে দুর্নীতি বিষয়ে কোনো ছাড় নাই, অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডাঃ মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, অতিদ্রুত তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, দুর্নীতির সাথে কোন আপোষ করেন না,বলেও আশ্বস্ত করেন।
যোগাযোগ
বার্তা বিভাগঃ 01883-306048
ই-মেইল: shadhinsurjodoy@gmail.com
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | স্বাধীন সূর্যোদয় | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।