আসাদুজ্জামান,(কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি)
৫ সেপ্টেম্বর /২৫অর্ধশত বছরের ঐতিহ্যবাহী কুড়িগ্রাম সাধারণ পাঠাগারে নিজেদের রাজনৈতিক দখল প্রতিষ্ঠা করতে না পেরে পাঠাগারটি ধ্বংসের চক্রান্ত লিপ্ত হয়েছে কতিপয় নাম সর্বস্ব বাম সংগঠনের কর্মীরা এমন অভিযোগ পাঠাগারের সাধারণ পাঠক শিক্ষার্থীদের।
তারা জানান, পাঠাগারটি ধ্বংস করতে কতিপয় অনিবন্ধিত নামসর্বস্ব ১৯ বাম সংগঠনের ব্যানারে গত ৪ আগস্ট জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠাগারের প্রকৃত সাধারণ পাঠক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে। অভিযোগে নিজেদের আখের গোছাতে পাঠাগারের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশোনাকে কোচিং সেন্টার, দখলদারিত্ব, অনিয়ম ও ধ্বংসযজ্ঞ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো জানান, আমরাও জেলা প্রশাসকের কাছে তাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছি।
এই পাঠাগারে বসে ক্যারিয়ার বিষয়ক পড়াশোনা করে সম্প্রতি এনটিআরসিএ থেকে স্কুল পর্যায়ে মেধার ভিত্তিতে চাকুরি পেয়েছেন ফয়সাল আহমেদ সাগর। তিনি বলেন, "আমার জানা মতে আমাদের সার্কেলের বেশিরভাগেরই চাকরির পিছনে কুড়িগ্রাম সাধারণ পাঠাগারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। কুড়িগ্রাম সাধারণ পাঠাগারে পড়াশুনা করে এ পর্যন্ত কুড়িগ্রাম জেলার ৫০ জনের ও অধিক শিক্ষার্থী মেধার ভিত্তিতে চাকরি লাভ করেছেন । যারা সাধারণ পাঠাগারের পড়াশুনার পরিবেশ নষ্টের পায়তারা করছেন, তারা পারলে কুড়িগ্রামে পড়াশুনার এরকম আর একটি নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করে দেখান। চ্যালেঞ্জ রইলো।"
পাঠাগারের আরেক পাঠক কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মমিনুর রহমান বলেন, "পাঠাগারে পড়াশোনার পরিবেশ বন্ধের পায়তারা পরাস্ত করা হবে। তিনি আরো বলেন, পোলাপান পড়াশোনা করে এটাই এদের (বামদের) সহ্য হচ্ছে না। পাঠাগারের একজন নিয়মিত পাঠক হিসেবে তাদের মিথ্যা অভিযোগ দেখে আফসোস হচ্ছে!"
পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক, মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন,
"২০১৭ সালে কুড়িগ্রামের তৎকালীন ডিসি খান মোঃ রুহুল আমিন স্যার এটাকে একটা ক্যরিয়ার প্লানিং সেন্টার হিসেবে ঘোষণা করেন। তারপর থেকে সেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বই পড়ার পাশাপাশি চাকরির পড়াশোনাও করেন। একসময়ে এনডিসি, এসিল্যান্ড স্যারসহ কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের স্যারেরা এখানে ক্লাস নিতেন।"
অনুসন্ধানে জানা যায়, একসময় সাধারণ পাঠাগারটি বিভিন্ন বাম সংগঠন অবৈধভাবে দখল করে মাসের পর মাস রুমে তালা ঝুলিয়ে চাবি রেখে দিতেন নিজেদের দখলে। তখন অরাজনৈতিক সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রবেশ ছিল একেবারেই নিষিদ্ধের মতো। তারা বিধিবহির্ভূতভাবে পরিচালনা করতেন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। এছাড়াও পাঠাগারে চলত মাদকদ্রব্য সেবন ও নারীদের দিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের নামে অশ্লীল নৃত্য। পাঠাগার হলেও বই পড়া নয়, এখানেই চলতো নানা সাংস্কৃতিক সংগঠনের নিয়মিত গান-নৃত্যের কার্যক্রম।
বই পড়ুয়া পাঠকরা একসময় তাদের এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষিপ্ত হয়ে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে প্রশাসনের পরামর্শ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় পাঠাগারটি সাধারণ পাঠক ও শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করেন ফলে বর্তমানে বিভিন্ন বাম সংগঠনগুলো তাদের দখলদারিত্ব হারিয়ে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসককে দেয়া ১৯ সংগঠনের স্মারকলিপি নিয়ে কুড়িগ্রাম সাধারণ পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক ও জুলাই গণ অভ্যুত্থানের অন্যতম ছাত্র নেতা আব্দুর রাজ্জাক রাজ জানান,
" বর্তমানে সাধারণ পাঠাগারটি কুড়িগ্রামের সকল পাঠক ও বই পড়ুয়া শিক্ষাক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। বাম সংগঠনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে আমরা এখানে শিক্ষার পরিবেশ তৈরী করেছি। তারা বই পড়ার বদলে এখানে রুম দখল করে নাচ, গান ও মাদক সেবন করতো। পাঠাগার কোন মাদকসেবীদের আস্তানা হতে পারেনা। পাঠাগারের বর্তমান কমিটি ও সাধারণ পাঠকরা তাদের বিতারিত করায় তারা এই পাঠাগারটি ধ্বংসের পায়তারা করছেন।"
জেলা প্রশাসককে দেয়া নামসর্বস্ব ১৯ সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মারকলপিটি স্বাক্ষর করেছেন স্থানীয় ম্যাগাজিন হিজিবিজি সম্পাদক রাজ্য জ্যোতি। তিনি জানান, সাধারণ পাঠাগার পরিচালনায় সরকারি নীতিমালা মানতে হবে। বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগতভাবে এর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং সাধারণ পাঠাগারের জন্য পাঠাগারকে উন্মুক্ত করতে হবে। আমাদের দাবী আদায়ে আমরা আইনী লড়াইয়ের জন্যও প্রস্তুত।
এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ নষ্টের পায়তারাকে শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।
এবিষয়ে কথা হলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন জানান, পাঠাগার হচ্ছে জ্ঞান লাভের স্থান। এখানে যে কোন পড়াশোনা হতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের একাডেমিক, ক্যারিয়ার, গবেষণা ও সমসাময়িক বিষয়ে জ্ঞান লাভের কেন্দ্র।
সাধারণ পাঠাগার সম্পর্কে জানতে চাইলে, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ জানান, একটি স্মারকলিপি পেয়েছি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।#
আসাদুজ্জামান, জেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম।
০১৭১৮৬৮৫৪০৮
যোগাযোগ
বার্তা বিভাগঃ 01883-306048
ই-মেইল: shadhinsurjodoy@gmail.com
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | স্বাধীন সূর্যোদয় | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।