মোঃ আল-আমিন (স্টাফ রিপোর্টার): ২০০৯ সালের এই দিনে ভোলার লালমোহনের নাজিরপুর ঘাটে যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় এমভি কোকো-৪ লঞ্চ। এতে প্রাণ হারায় দক্ষিণ ভোলার ৮১ জন যাত্রী।
কোরবানির ঈদের আগের রাতের এ দুর্ঘটনায় ভোলাবাসীর আনন্দ রূপ নিয়েছিল বিষাদে। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় স্বজনহারা পরিবারের কান্না আজও থামেনি।
স্বজনহারা শোকের দিনটি পালন করা হয় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মরণসভা ও দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
অতিলোভী মালিকদের খামখেয়ালিপনায় অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ছিল দুর্ঘটনার কারণ। বিশেষ করে এখনও ঈদ মৌসুমে ধারণ ক্ষমতার অধিক যাত্রী নিয়ে চলে অধিকাংশ লঞ্চ। যা নৌ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
কোকো-৪ দুর্ঘটনায় লালমোহন উপজেলার চর ছকিনা গ্রামের আব্দুর রশিদ তার ছেলে নূরে আলম সাগর, ছেলের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী ইয়াসমিন ও ছেলের শ্যালিকা হ্যাপি বেগমকে হারিয়েছেন। নূরে আলম ঈদুল আযহা উপলক্ষে নববধূ ও শ্যালিকাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিল। কিন্তু সেই দুর্ঘটনায় ৩ জনই মারা যায়। নববধূর ওই লাশের কথা মনে করতেই আজও কেঁদে ওঠেন ওই পরিবারের সদস্যরা।
আব্দুর রশিদের পরিবারের মতো কোকো-৪ দুর্ঘটনায় স্বজন হারা অন্যরাও তাদের বাঁধ ভাঙা কান্না চেপে রাখছেন কষ্টে। স্বজন হারানোর শোকে কাতর ওই সকল পরিবার এখনও বাকরুদ্ধ।
একই এলাকার বাকলাই বাড়ির শামসুন নাহার স্বামী, সন্তান, দেবরসহ একই বাড়ির ১৬ জন নিয়ে কোকো লঞ্চে রওনা হয়েছিল বাড়িতে ঈদ করতে। বাড়ির কাছের ঘাটে এসেই লঞ্চ ডুবিতে নিহত হয় তার মেয়ে সুরাইয়া (৭), ভাসুরের মেয়ে কবিতা (৩) ও দেবর সোহাগ (১৩)। সেই থেকেই শামসুন নাহার আদরের মেয়ের শোকে কাতর।
শামসুন নাহারের মতো কোকো-৪ লঞ্চ দুর্ঘটনায় কেউ হারিয়েছে পিতা-মাতা, কেউ হারিয়েছে সন্তান, কেউবা ভাই-বোন আর পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে। সেদিনের সেই মর্মান্তিক ট্রাজেডির কথা মনে করে শোক সাগরে ভাসছে পুরো লালমোহন।
লালমোহন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জসিম জনি বলেন, দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল লালমোহন উপজেলার বাসিন্দা। এর মধ্যে শিশু ছিল ৩৬ জন। যদিও বর্তমানে ঢাকা-লালমোহন রুটে একাধিক বিলাসবহুল অত্যাধুনিক লঞ্চ চালু করা হয়েছে। ঘাটগুলোতেও করা হয়েছে আধুনিকায়ন। দুর্ঘটনায় সেসময় মেরিন আইনে দুটি মামলা দায়েরের কথাও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। আগামীতে যাতে আর কোনো নৌ দুর্ঘটনা না ঘটে এবং ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রী ও ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলাচল করতে না পারে সে ব্যাপারে সচেষ্ট রয়েছে প্রশাসন।
প্রসঙ্গত ২০০৯ সালের ২৬ নভেম্বর ঢাকা থেকে ঈদুল আজহার আগের দিন অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ভোলার লালমোহনের উদ্দেশে ছেড়ে আসে লঞ্চটি। রাতে লালমোহনের নাজিরপুর ঘাটের কাছে এসে যাত্রীর চাপে ডুবে যায় এমভি কোকো-৪ লঞ্চটি।
যোগাযোগ
বার্তা বিভাগঃ 01788-729304, 01883-306048
ই-মেইল: shadhinsurjodoy@gmail.com
কার্যালয়: জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | স্বাধীন সূর্যোদয় | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।