বিদায়—একটি তিন অক্ষরের ছোট্ট শব্দ, অথচ এর ভিতরে এক বিশাল দুঃখ, এক অবর্ণনীয় বিষাদ লুকানো। এই শব্দটি কানে আসার সাথে সাথে যেন হৃদয়টা এক অসীম শূন্যতায় ভরে ওঠে। কেন এমন হয়? কারণ বিদায় একটি চিরন্তন বিচ্ছেদ, এবং বিচ্ছেদ মানেই কষ্ট। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে নানা বিচ্ছেদ আসবেই, আর প্রতিটি বিচ্ছেদের সাথে আছেই এক গভীর কষ্ট। বিদায় কেবল একটি শব্দ নয়, এটি এক জীবনস্মৃতি, যা চলে যায় ছায়ার মতো, একদিন অবশিষ্ট থাকে কেবল স্মৃতি।
মানবশিশু যখন পৃথিবীতে পদার্পণ করে, প্রথম যে শব্দটি সে শুনে, তা হলো বিদায়। মায়ের গর্ভের বন্ধন ছিন্ন হয়ে সে পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। প্রথম বিদায়ের এই বেদনা সেই শিশুর জন্য এক অনাবিষ্কৃত দুঃখ, যেটি তার মনে গেঁথে থাকে, যদিও তা সে বুঝতে পারে না। তারপর, জীবনের নানা বাঁকে বাঁকে আসে আরও বিদায়। অনেক পুরানো সম্পর্ক, প্রিয় স্মৃতি, এবং নানান ভালোবাসার ছায়া একে একে হারিয়ে যেতে থাকে।
শিক্ষাজীবনের শেষে যখন বিদায়ের সময় আসে, তখন সহপাঠী ও প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিচ্ছেদ সহজে মেনে নেওয়া যায় না। সেই বন্ধন, যা হাজার হাজার দিন পরিশ্রম, হাসি-রসিকতা, সাফল্য-ব্যর্থতার মাঝে গড়ে উঠেছিল, এক ঝটকায় ছিন্ন হয়ে যায়। তবে এই বিদায়ের মধ্যে এক ধরনের শান্তি থাকতে পারে, যদি সাফল্য সঙ্গী হয়। যদি মনে হয় যে, সমস্ত পরিশ্রম সফলতার দিকে নিয়ে গেছে, তবে সেই বিদায়ের দুঃখ কিছুটা সওয়া হয়। কিন্তু, যখন অনুভব হয় যে, সময়ের মূল্যায়ন করা হয়নি, পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া হয়নি, তখন বিদায়টি সত্যিই হৃদয়ে এক অগাধ দুঃখের সৃষ্টি করে। এই কষ্ট মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন। এটি যেন জীবনের এক তিক্ত সত্য, যা আমাদের অঙ্গীকার করা থাকে না, কিন্তু তা কখনও অব্যাহতি দেয় না।
সবশেষে, যে বিদায়টি সব বিদায়ের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন, সবচেয়ে কষ্টের, তা হলো মৃত্যু। মৃত্যু, এই অনিবার্য বিদায়, একে ঠেকানো যায় না। মৃত্যুর দিন কিংবা সময় সম্পর্কে কেউ জানে না। কুরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “কোনো মানুষ জানে না, সে আগামীকাল কী উপার্জন করবে এবং কোনো মানুষ জানে না, সে কোন স্থানে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ। তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।” (সূরা লোকমান ৩৪)
মৃত্যু, এক চিরন্তন বিদায়, যা মানুষের প্রতি এক কঠিন পরীক্ষার মতো আসে। এই বিদায়ের যন্ত্রণা অপরিসীম। কিন্তু, যখন জীবনযাপন শেষে মৃত্যু আসে, তখন একমাত্র শান্তি হতে পারে—সত্যের পথে চলা, সততার সাথে জীবন যাপন করা, যাতে কোনো পরিতাপ না থাকে, কোনো ভুল কাজের জন্য অশান্তি না আসে।
এভাবে, জীবনের প্রতিটি বিদায় একদিন আমাদের কাছে আরো অর্থপূর্ণ হয়ে উঠবে যদি আমরা মৃত্যুর চিন্তা করি, আমাদের অতীতের কর্মকাণ্ডের প্রতি দৃষ্টি রাখি এবং আত্মসমালোচনা করি। তবে, আমাদের ছোট-বড় সব বিদায়গুলোই সার্থক হয়ে উঠবে। জীবনের শেষ বিদায়টি যেন শান্তিপূর্ণ হয়, সেই জন্য আমাদের প্রতিটি দিন সৎভাবে কাটানো উচিত, যাতে একদিন সেই বিদায়ে কোনো দুঃখবোধ না থাকে, বরং প্রার্থনা থাকে—"হে আল্লাহ, তুমি আমাদের সকলকে মাফ করে দিও এবং আমাদের জীবনের শেষ বিদায়কে সুখী ও শান্তিময় করে দাও।"
কলমে: শাইখুল হাদিস,হযরত মাওলানা মুফতি মাহমুদ হাসান সাহেব (হাফিজাহুল্লাহ)
শিক্ষা সচিব: জামিয়া নুরুল উলুম কওমি মাদ্রাসা গফরগাঁও,মোমেনশাহী।
যোগাযোগ
বার্তা বিভাগঃ 01788-729304, 01883-306048
ই-মেইল: shadhinsurjodoy@gmail.com
কার্যালয়: ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | স্বাধীন সূর্যোদয় | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।