মুহাম্মদ তোয়াহার উদ্দিন (স্টাফ রিপোর্টার)
ফিরে দেখা। রসিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাটা আলহাজ্ব মরহুম রসিদ আহমদ চৌধুরী ১৯৪৬ সালের ৩১শে ডিসেম্বর ফাঁসিয়া খালী সিকদারপাড়ার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে (মরহুম মৌলভী আজিমউদ্দিনের নাতি) জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবকালে অত্যন্ত ডানপিটে ছিলেন। পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত সময়ে প্রানপ্রিয় পিতাকে হারান। শুরু হল বাড়ির বড় ছেলের কঠিন দায়িত্বভার গ্রহণ। ৪ ভাই ও ৩ বোনের অভাব অনটনের সংসারে সঠিক দায়িত্ব পালন করে সবাইকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
রসিদ আহমদ চৌধুরী মাত্র ২০/২১ বছর বয়সে ফাঁসিয়াখালী সিকদারপাড়া জামে মসজিদের মতোয়াল্লির দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। সুদীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতার একটি ইতিহাস ও বটে।
তিনি ১৯৮৭ সাল থেকে আমৃত্যু ফাঁসিয়াখালী আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার সভাপতি ছিলেন। নব্বই এর দশকে খ্রিস্টান মিশনারীরা দরিদ্র মুসলিম ও হিন্দুদেরকে ধর্মান্তরিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। এবার রুদ্রপাড়ায় শারদীয় দূর্গা উৎসবে গিয়ে জানতে পারলাম রসিদ মিয়ার দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণে মিশনারীদের উদ্দেশ্য সফল হয় নি যদিওবা কয়েকটি পরিবার ধর্মান্তরিত হয়েছিল (পরবর্তীতে ফিরে এসেছে)।
কর্মজীবনের শুরুতে তিনি জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। ব্যবসায়িক জগতেও রসিদ মিয়া ছিলেন অসম্ভব সফল ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। নিউ মার্কেট, চকরিয়ার প্রথম বহুতল বিশিষ্ট শপিং সেন্টার যেটা চকরিয়াকে আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। RAC ব্র্যান্ডের ব্রিক ফিল্ড এর ইট দিয়ে ৮০/৯০ দশকে চকরিয়ায় প্রায় সমস্ত নির্মাণ কাজ হয়েছে । জনশ্রুতি আছে, আল্লাহর রহমতে ঐ সময়ে নির্মিত হওয়া প্রায় প্রত্যেকটা মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তিনি অল্প কিছু হলেও ইট দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন । লামা -আলীকদমে পাথর ব্যবসার পথিকৃৎ ছিলেন। রাবার বাগানের সফল উদ্যোক্তা ছিলেন। চকরিয়ায় স্যানিটেশন ও আরসিসি পাইপ ম্যানুফ্যাকচারের ব্যবসা উনার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছিল। উনার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল --তিনি প্রত্যেকটি ব্যবসায় এলাকার লোকদের কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করেছেন বিশেষ করে নিকট আত্মীয়দের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
রসিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় - এলাকাবাসীর সমন্বয়ে ও সার্বিক সহযোগিতায় রসিদ আহমদ চৌধুরীর অক্ষয় সৃষ্টি যা উনাকে অমরত্ব দান করেছে। অন্ধকারে নিমজ্জিত এলাকায় শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছেন। প্রায় ২০০০ ছাত্র-ছাত্রী এই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে সমাজকে, দেশকে আলোকিত করেছে। প্রাক্তন অনেক ছাত্র-ছাত্রী এখন ম্যাজিস্ট্রেট, ব্যাংক কর্মকর্তা, শিক্ষক, অ্যাডভোকেট, বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা, সফল ব্যবসায়ী, প্রবাসী উদ্যোক্তা হিসেবে কর্মরত থেকে স্কুলের সুনাম বৃদ্ধি করেছেন। স্কুলের উন্নয়ন ও সুনাম বৃদ্ধির জন্য রসিদ মিয়া যে পরিমান সময় ব্যয় করেছেন নিজের পরিবারের পিছনেও সেই পরিমান সময় ব্যয় করেন নি। এই স্কুলকে ও স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে তিনি নিজ সন্তানের চেয়েও বেশি আপন মনে করতেন।
ফাঁসিয়াখালী ছড়ারকূল আদর্শ ইসলামিক একাডেমিতে ১০ শতক জমি দান করেছেন এবং আমৃত্যু সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। একাডেমীর শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের নিয়মিত খোঁজ খবর নিতেন।
এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় ফাঁসিয়াখালী রাস্তার মাথা জামে মসজিদের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। এলাকাবাসী যখনই কোন প্রয়োজনে উনার কাছে এসেছেন, আর্থিক সহায়তা হোক - সুপরামর্শ দিয়ে হোক - বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে হোক - সুব্যবহার করে হোক সবসময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, কখনোই নিরাশ করেন নি। ধনী-গরিব, ছোট-বড়, ধর্ম-বর্ণ, রাজনৈতিক ভেদাভেদ না করে সবার জন্য উনার দ্বার উন্মুক্ত ছিল এবং সবাইকে উপযুক্ত সম্মান দিয়ে কথা বলতেন।
আজীবন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও আদর্শের প্রতি অনুগত ছিলেন। তাহারই হাতেগড়া প্রতিষ্ঠানের এড হক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তাহার সন্তান মো: শাহেদুল মোস্তফা। তিনি ১৯৯৮ ব্যাচের চকরিয়া, পেকুয়ার অন্যতম সংগঠক। তাহারই হাতদিয়ে স্কুলের হারানো সফলতা এবং ঐতিহ্য ফিরে আসবে বলে একাবাসীর দৃঢ় বিশ্বাস। আজ ৩/০৩/২৫ চট্রগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড, বিপ্লব গাঙ্গুলি স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়। উল্লেখ্য যে তাহার বাবা সাদা মনের রসিদ আহমদ চৌধুরী নিজে আলোকিত হয়ে সমাজের সব সৃষ্টিকে আলোকিত করেছেন। বিরল প্রতিভার অধিকারী ক্ষণজন্মা দানবীর আলহাজ্ব রসিদ আহমদ চৌধুরী ২০২১ সালের ২৭শে নভেম্বর ইন্তেকাল করেন। সমস্ত দোষ - ত্রুটি ক্ষমা করে আল্লাহ মরহুমকে বেহেস্ত নসিব করুন, আমিন।
যোগাযোগ
বার্তা বিভাগঃ 01788-729304, 01883-306048
ই-মেইল: shadhinsurjodoy@gmail.com
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | স্বাধীন সূর্যোদয় | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।