মোঃ ইয়াছিন শেখ(কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি)
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সারা দেশের মতো কিশোরগঞ্জের খামারিরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায়। জেলার ১৩টি উপজেলায় খামারের কর্মচারী-মালিকরা ব্যস্ত সময় পার করছে। দিন যত ঘনিয়ে আসছে ব্যস্ততাও বেড়েছে তাদের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া। এসব খামারে ছোট-বড় সব আকারের পশু প্রস্তুত করা হয়েছে।
খামারে দেশি জাতের গরু ছাড়াও রয়েছে ফ্রিজিয়ান, শাহী ওয়াল, ব্রাহামা, ইন্ডিয়ান বোল্ডারের মতো বড় জাতের গরু। এছাড়াও মহিষ, বলদ ও গয়াল। প্রাকৃতিকভাবে ঘাস, খড় কুটা, ভুসি খাইয়ে বড় করায় খামারে এসব গরুর চাহিদাও অনেক। বাজারে দেশীয় গরুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় ক্ষতিকর হরমোন কিংবা ইনজেকশনের ব্যবহার ছাড়াই দেশীয় পদ্ধতিতে গবাদিপশু পালন করা হয়েছে। ভারতীয় গরুর উপর নির্ভর না করে নিজেদের দেশীয় গরুতেই কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে মনে করছেন খামারিরা।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ১৩টি উপজেলায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৯টি। এর মধ্যে চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৯১১টি, যা জেলার চাহিদা পূরণ করেও ৩২ হাজার ৪৫৮টি পশু দেশের চাহিদা পূরণ করবে। জেলায় ৭০ হাজার ৭১টি ষাঁড়, ৪ হাজার ৬টি বলদ, ১৮ হাজার ৫৫৯টি গাভি, ১ হাজার ২৮৮টি মহিষ, ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৯৬টি ছাগল, ৫ হাজার ৫১৬টি ভেড়া ও অন্যান্য ৩৩টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ১৩টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় সব মিলিয়ে ১১৬টি গরুর খামার রয়েছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদরে ১২টি, করিমগঞ্জ ১২টি, তাড়াইল ৭টি, হোসেনপুর ৭টি, পাকুন্দিয়া ১০টি, কটিয়াদী ১০টি, কুলিয়ারচর ৭টি, ভৈরব ৮টি, বাজিতপুর ১২টি, নিকলী ৭টি, ইটনা ৯টি, মিঠামইন ৭টি, ও অষ্টগ্রাম ৮টি। গ্রামে গঞ্জে এমন কোনো বাড়ি নেই যেখানে ২-৪টি গরু পালন হচ্ছে না। প্রতি বছর গরু পালন করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে অনেকেই। শুধু কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে বিগত এক দশকে গরু লালন-পালন ও কেনা-বেচা করছেন হাজার হাজার মানুষ। সকল খামারগুলোতেই প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কোনো প্রকার ক্ষতিকারক ওষুধ ছাড়াই গরু মোটাতাজা করা হয়ে থাকে। অল্প সময়ে গরু মোটাতাজা করতে যেন কোনো খামারি গরুকে বিভিন্ন প্রকার নিষিদ্ধ ওষুধ যেমন- হরমোন, ডেক্সামিথাজল, ডেকাসন, স্টোরেয়েড ইত্যাদি না খাওয়ায় তার জন্য জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা সর্বদাই সচেষ্ট রয়েছেন।
কোরবানীর ঈদের পশুর চাহিদা মিটিয়েও খামারীরা জেলার বাইরে বিক্রি করবে। এছাড়া জেলায় কোরবানীর পশু বিক্রির জন্য মোট ৬৩টি গরুর হাট রয়েছে। ৬৩টি হাটে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে ৪০টি ভেটেনারী মেডিকেল টিম কাজ করবে। কোন হাটে কোরবানীর পশু অসুস্থ্য বা স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রচার সেবা দেয়া হবে।
যদি কোন পশু ট্রাকে উঠা নামা করতে রাস্তায় অসুস্থ্য হয়ে পড়ে সেখানেও ভেটেনারী মেডিকেল টিম পৌছে যাবে। প্রতিটা হাটে জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে করে পশুর মালিকরা পশু বিক্রি করে নিরাপদভাবে তাদের বিক্রিয়কৃত টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারে।