প্রকৃতি কন্যা সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর গোয়াইনঘাট রাস্তার সংস্কার কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি, ধীর গতি ও অনিয়মের প্রতিবাদে গোয়াইনঘাট এর সচেতন নাগরিকবৃন্দের আয়োজনে এক বিশাল মানববন্ধন বন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৪ জুন শনিবার বিকাল ৪ ঘটিকার সময় স্থানীয় সালুটিকর বাজারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী বলেন, অবিলম্বে সালুটিকর গোয়াইনঘাট রাস্তা পুর্ণ সংস্কার করে অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন এই রাস্তা ১৯৯৪ সালে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান নির্মাণ কাজের সুচনা করেন। কিন্তু বর্তমানে রাস্তাটি ভেঙে গর্ত তৈরী হয়ে মানুষের জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, এই রাস্তা অত্র এলাকার মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই যথাসময়ে গুণগত মানের কাজ সম্পাদন না হলে এলাকার জনসাধারণ গণ আন্দোলন গড়ে তুলবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ আলী বলেন রাস্তাটির যথাযথ সংস্কার অনিবার্য। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন। গোয়াইনঘাট পেশাজীবী পরিষদ সদস্য প্রভাষক মো:লুৎফুর রহমান ও গোয়াইনঘাট ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুসলেহ উদ্দিন মুনায়েম এর যৌথ পরিচালনায় সভাপতিত্ব করেন গোয়াইনঘাট পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক নাসির উদ্দিন। অন্যান্য অতিথির মধ্যে বক্তব্য রাখেন, গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, রুস্তমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন শিহাব, গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান খোদেজা রহিম কলি, মাওলানা গোলাম আম্বিয়া কয়েছ, সিনিয়র সাংবাদিক রোটারিয়ান এম এ রহিম, গোয়াইনঘাট এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কামরুল আহমদ শেরগুল, গোয়াইনঘাট প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি এম এ মতিন, সদস্য হেলাল আহমদ বাদশা, হারুন আহমদ, তোয়াকুল মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা নজরুল ইসলাম, জাগ্রত জনতা সংঘের সভাপতি, নন্দির গাও মাদ্রাসার মোহতামিম রফিক আহমদ মহল্লী, সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ, সমাজসেবক সামছুদ্দিন আল আজাদ, যুব নেতা মোহাম্মদ আলী, জিয়া উদ্দিন, হাবিবুর রহমান, এপিপি এডভোকেট মোবারক হোসাইন, পেশাজীবী পরিষদ সদস্য সচিব বিলাল উদ্দিন, সদস্য সামছুজ্জামান জামান, আব্দুর রউফ, ফয়সল আহমদ, জামিল আহমেদ, বরুল ইসলাম গোয়াইনঘাট এসোসিয়েশন এর সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল আহমদ, সদস্য মাওলানা নুরুল আমিন হেলালী, গোয়াইনঘাট উন্নয়ন ফোরাম এর উপদেষ্টা আনোয়ার হোসেন,এক্সেল গ্রুপের সভাপতি মানিক মিয়া গোয়াইনঘাট ইসলামী যুব ফোরাম এর সভাপতি সাইফুর রহমান, যুগ্ন সম্পাদক মাওলানা অলিউডর রহমান, গোয়াইনঘাট ছাত্র পরিষদের সভাপতি শিব্বির আহমদ, সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন বাবুল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম, পাবলিক ইউনিভার্সিটিজ স্টুডেন্ট’স এসোসিয়েশন অব গোয়াইনঘাট এর সদস্য রুবেল আহমদ রাহী, তালামিযে ইসয়ামিয়ার সভাপতি, শরীফ উদ্দিন, গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রেস ক্লাবের আহবায়ক ইসলাম আলী, গোয়াইনঘাট প্রবাসী সমাজ কল্যাণ পরিষদ এর সদস্য এনামুল হক, মিজানুর রহমান, ইসব পুর যুব সংঘের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আমিন, সোনার বাংলা শিক্ষা ফাউন্ডেশন এর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, লেঙুড়া ইউনিয়ন ছাত্র সংসদের আহবায়ক জসিম উদ্দিন প্রমুখ সহ ২৫ টি সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রায় পাচ শতাধিক লোকজন অংশ গ্রহণ করে।
উল্লেখ্য যে সিলেটের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন সমৃদ্ধ এলাকা হচ্ছে গোয়াইনঘাট উপজেলা। সাত পাহাড়ের মোহনা বিছনাকান্দি, মায়াবতী ঝর্ণা পান্তুমাই, উৎমা ছড়া, তুরং ছড়া, দামারী পার্ক সহ অসংখ্য মুগ্ধকর পর্যটন স্পট গুলো পরিদর্শনের জন্য সালুটিকর – গোয়াইনঘাট রাস্তাই পর্যটকদের একমাত্র অবলম্বন। সিলেট শহর থেকে উপজেলা সদরে যাতায়াতের প্রধান সড়ক এটি। উক্ত রাস্তা দিয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম অঞ্চলের প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে। স্কুল, মাদ্রাসা, এতিমখানা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, হাট- বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্য পরিবহন সহ সব কিছুর জন্য অত্র এলাকার মানুষ এই রাস্তাকে বেছে নিতে হয়।প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক উল্লিখিত স্পটগুলোতে যাতায়াত করে। সালুটিকর থেকে তোয়াকুল স্ট্যান্ড পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রাস্তা ভাঙ্গা হলেও সালুটিকর বাজার থেকে দশগাও নোয়া গাও উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের স্টিমিটে আনেন নি। ভাঙা রাস্তা সংস্কার করে জন দুর্ভোগ লাগবে, আরাম দায়ক ও নিরাপদ যাত্রার জন্য সরকার ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে দশ গাও নোয়া গাও উচ্চ বিদ্যালয় হতে তোয়াকুল স্টেশন (পাইকরাজ) পর্যন্ত মাত্র ১০ কিলোমিটার রাস্তা RCC ঢালাই করে ১৮ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট ভারী রাস্তা নির্মাণের জন্য LGED কর্তৃক ২৮ কোটি ৯৯ লাখ ৮ হাজার ৩২৭ টাকা দুই ভাগে চুক্তিমূল্যে বরাদ্দ দেয়া হয়। DCL & MDH (JB) নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার মালিক দেলোয়ার হোসেন নামে বরিশালের এক ভদ্রলোক। কিন্তু তিনি কাজ পাওয়ার পর সাব-কন্ট্রাক্ট দেন সুনামগঞ্জের ফয়সাল নামীয় অন্য লোককে। ফয়সল নামীয় ঠিকাদার ৩০ জানুয়ারী ২০২৪ কাজ শুরু করেন যা ২ জানুয়ারী ২০২৫ কাজ শেষ হবার কথা । কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যার ফলশ্রুতিতে সরকারের কাছ থেকে অতিরিক্ত আর ও ৫ মাস বাড়ানো হয়। বাড়ানো সময় অনুযায়ী চলতি মাসের ১০ মে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু বাড়তি সময় শেষ হয়ে গেলেও এত দিনে ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যদিও প্রকৌশলী হাসিব আহামেদ দাবি করেন, এ পর্যন্ত ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। অসম্পূর্ণ রয়েছে ৫৫-৬০ শতাংশ। বর্তমানে চলমান কাজটি সম্পুর্নরুপে বন্ধ রয়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে এল জি ই ডির নির্মিত সড়কটির বেশিরভাগ অংশই ভাঙাচোরা ও অসংখ্য খানাখন্দে ভরা। RCC ঢালাইয়ের উপরের অংশ অটোমেটিক উঠে যাচ্ছে। পুরো রাস্তাটা কাদা-পানিতে একাকার সড়কটি জলাশয় না রাস্তা তা বোঝার উপায় নেই। ফলে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় অনেক দুর্ঘটনা। কোনো কোনো জায়গায় হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে যাওয়া সড়কটি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ জীবনকে এক প্রকার হাতের মুটোই নিয়ে এই রাস্তা পাড়ি দিতে হচ্ছে। গোয়াইনঘাট-সালুটিকর সড়কের উল্লিখিত ১০ কিলোমিটার RCC ঢালাইয়ের কাজের বাড়তি মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও প্রায় এক তৃতীয়াংশ কাজও সম্পন্ন হয়নি। যেটুকু কাজ হয়েছে তাতে অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে। ৫০ বছরের গেরান্টিযুক্ত টেকসই রাস্তা ৬ মাস থেকে ১ বছরে ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা। ইতোমধ্যে কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার ও বিশেষজ্ঞরা উক্ত রাস্তাকে আনফিট হিসেবে বলেছেন। উক্ত রাস্তা দিয়ে মুমুর্ষ রোগি, ডেলিভারি মহিলা ও মারাত্মক দুর্ঘটনা কবলিত মানুষকে দ্রুত সময়ে হাসপাতালে নিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা অসম্ভব। ছোট রাস্তা পার হতে অসুবিধার কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতে হয় শত শত CNG , পিক আপ, ডি আই ট্রাক, বড় ট্রাক সহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনকে। অন্যদিকে রাস্তা ভাঙ্গার কারণ দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে নিয়মবহির্ভূত দ্বিগুণ ভাড়া। আধা ঘণ্টার গন্তব্যে পৌঁছাতে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। সড়কের এক অংশ ঢালাই, আরেক অংশ গর্ত করে রাখা এবং রডগুলো খাড়া করে রাখার কারণে গাড়ির প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে।চলাচলে মানুষের জীবনের যুক্তি রয়েছে শতভাগ। জন দুর্ভোগ লাগব ও দ্রুত কাজ সম্পাদনের জন্য গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী ইতোমধ্যে ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তিনি তা আমলে নেন নি। ইতোমধ্যে NBR এর দুর্নীতি দমন কমিশন মহাপরিচালক, অতিরিক্ত কর কমিশনার রকিব আল হাফিজ এল জি ই ডির ইঞ্জিনিয়ার এর সাথে কথা বলেছেন কিন্তু কোন সমাধান হয় নি। এমতাবস্থায় নায্য দাবী আদায়ের জন্য এলাকাবাসীর সর্ব সাধারণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে উল্লিখিত কর্মসূচির আয়োজন করে।