মোঃ ছায়েদ আলী শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি
চা বাগান যেন এক অবহেলিত জনপদ। বছরের পর বছর ধরে চা শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও তাদের জীবনযাত্রার মান থেকে শুরু করে চিকিৎসা ব্যবস্থাও থেকে গেছে পশ্চাৎপদ। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, অ্যাম্বুলেন্স—এটিও নেই অধিকাংশ চা বাগানে।
বিভিন্ন দুর্ঘটনা, হঠাৎ অসুস্থতা বা জরুরি প্রসবের সময় দ্রুত চিকিৎসা পাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কিন্তু চা বাগান এলাকার হাসপাতালগুলোতে অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে অনেক শ্রমিককেই সময়মতো হাসপাতালে নিতে না পারায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। অনেকে গুরুতর অবস্থায় দিনের পর দিন বাগানের ক্লিনিকেই পড়ে থাকেন চিকিৎসা না পেয়ে। প্রসূতি মায়েদেরও সময়মতো হাসপাতালে নিতে না পারায় শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার বেড়ে যায়।
একটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা অনুসারে, প্রায় ৭৩% চা বাগান কর্মীরা তাদের নিজস্ব বাগানের মেডিক্যাল সেন্টারে কোনো সেবা না পেয়ে নিজ উদ্যোগে বাহিরের হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন, যার অন্যতম কারণ হলো সেখানে এম্বুলেন্স বা উপযুক্ত পরিবহন ব্যবস্থা না থাকা।
বাংলাদেশের অধিকাংশ চা বাগানে নামমাত্র হাসপাতাল থাকলেও নেই উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, নেই পর্যাপ্ত ওষুধ, নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, তার উপর অ্যাম্বুলেন্সের মতো জরুরি যানবাহনের অভাব চা শ্রমিকদের দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। জরুরি পরিস্থিতিতে ট্রলি, ভ্যানগাড়ি, এমনকি কাঁধে করে রোগী বহনের দৃশ্য এখনও নিত্যদিনের ঘটনা,
সরকার, বাগান মালিকপক্ষ এবং স্বাস্থ্য বিভাগ যদি এই বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তাহলে চা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে। প্রত্যেক চা বাগানের হাসপাতালে অন্তত একটি অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করা এখন সময়ের দাবি, তবেই শ্রমিকরা যেমন নিরাপদ, তেমনি জাতিও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পথে এক ধাপ এগিয়ে যাবে চা শ্রমিকরা।