
মোঃ সোলায়মান গনি স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম
মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন ‘৬ ডিসেম্বর—কুড়িগ্রাম হানাদার মুক্ত দিবস’। গৌরবময় সেই স্মৃতি ধারণ করে যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কুড়িগ্রামে উদযাপিত হয়েছে দিনটি। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় সমৃদ্ধ ছিল পুরো আয়োজন।
বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রায় উচ্ছ্বাস
শনিবার সকালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও শহীদদের স্মরণে নীরবতার মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর শুরু হয় বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রা। মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, শিক্ষার্থী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ব্যানার–ফেস্টুন নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
শোভাযাত্রাটি জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কলেজ মোড়স্থ স্বাধীনতার বিজয় স্তম্ভে গিয়ে সমাবেশে রূপ নেয়। সেখানে মুক্তিকামী মানুষের প্রাণের দাবিতে গড়ে ওঠা মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা, চেতনা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এতে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ রানা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর অবসরপ্রাপ্ত আব্দুস সালাম, বীর প্রতীক আব্দুল হাই সরকার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, উপজেলা কমান্ডার আব্দুল বাতেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা বলেন, “কুড়িগ্রাম হানাদার মুক্ত দিবস শুধু উদযাপনের দিন নয়, এটি নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানোর অনন্য সুযোগ।” তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পাঠচর্চা বৃদ্ধি, স্মৃতিস্তম্ভ সংরক্ষণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদর্শনে স্থায়ী উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও দেশাত্মবোধক পরিবেশনা
উদযাপনের অংশ হিসেবে দেশাত্মবোধক গান, নৃত্য ও আবৃত্তির আয়োজনও করা হয়। বিভিন্ন স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের গান পরিবেশন করে শ্রোতাদের আবেগাপ্লুত করে। স্বাধীনতার চেতনা, দেশপ্রেম ও ত্যাগের মূল্যবোধ তুলে ধরা হয় এসব পরিবেশনায়।
১৯৭১ সালের সেই ঐতিহাসিক দিনটির স্মৃতি
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীর ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালান। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধে পরাজিত হয়ে দখলদার বাহিনী কুড়িগ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। কুড়িগ্রাম পুরোপুরি হানাদারমুক্ত হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে জেলার মানুষ আনন্দে উল্লসিত হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। সেই বিজয়ের আনন্দ আজও সমানভাবে বয়ে আনে গৌরব ও প্রেরণা।
একই চেতনায়, পরবর্তী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ধারণ করাতে এবং জাতির ইতিহাসকে সমুন্নত রাখতে প্রতিবছর নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করে কুড়িগ্রামবাসী।