মোঃ সোলায়মান গনি, উলিপুর উপজেলা প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের পাঁচপীর বাজারের পশ্চিম পাশে, সবুজে ঘেরা ডালিমা গ্রামে অবস্থিত এক অর্ধশতাব্দী পুরনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান— ডালিমা পঞ্চানন পলাশতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রায় ৫০ বছর ধরে এই বিদ্যালয় গ্রামীণ শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে, অথচ এখনো টেকসই ভবনের অভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন চরম ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান ও পাঠগ্রহণ করে চলেছেন।
১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি প্রথমে রেজিস্ট্রারভুক্ত ছিল। ২০০০ সালে বিদ্যালয়ের পূর্ণ নির্মাণের পর থেকে আর কোনো নতুন ভবন হয়নি। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ভবনের দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে, ছাদের ফাঁক দিয়ে বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভয় আর অস্বস্তি নিয়ে পাঠদানের চেষ্টা করছেন।
৬৪ শতাংশ জায়গাজুড়ে বিদ্যালয়টি অবস্থিত। বিদ্যালয়ের কোড ১০৭০১১২০৮, নং ১২২। এখানে দুই শিফটে পাঠদান হয়। বিদ্যালয়টি “বি” গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত হলেও অবকাঠামোগতভাবে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
বিদ্যালয়ে সরেজমিন গেলে দেখা যায়— ভবনের সিঁড়ি ভেঙে পড়েছে, দেয়ালে ফাটল, ছাদের রড বেরিয়ে আছে। সামান্য ভূমিকম্প বা ঝড়বৃষ্টিতেই ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নন্দিনী জানায়, আমরা আতঙ্কে ক্লাস করি। ছাদ থেকে পানি পড়ে, দেয়ালে ফাটল। ভয় লাগে কখন যেন ভেঙে পড়ে।
অভিভাবক মাজেদা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের লেখাপড়া ভালো, কিন্তু ভবনের অবস্থা ভয়াবহ। বাচ্চারা স্কুলে গেলে মন শান্ত থাকে না। দ্রুত নতুন ভবন দরকার।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আরফা নাহার জানান, বর্তমানে চারটি রুমের মধ্যে একটি পরিত্যক্ত, একটি শিক্ষক মিলনায়তন, বাকি দুই রুমে ক্লাস চলে। এত সংকীর্ণ জায়গায় এবং নড়বড়ে ভবনে পাঠদান করা কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। বহুবার আবেদন করেও ভবনের অনুমোদন পাইনি।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতা ও শিক্ষকদের পারদর্শিতায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান অনেক ভালো। এখানকার প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ আজ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত। যেমন, ৯০-এর দশকের প্রাক্তন ছাত্র রবিউল আলম, বর্তমানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত একজন প্রকৌশলী। তিনি বলেন, “এই বিদ্যালয় থেকেই আমার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু। ২০০০ সালে পূর্ণ নির্মাণ হয়, তারপর আর কিছু হয়নি। এখনকার অবস্থায় খুব কষ্ট লাগে। আমার দাবি, দ্রুত এই বিদ্যালয়টির টেকসই ভবন নির্মাণ করা হোক।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অমল চন্দ্র বর্মণ জানান, আগের প্রধান শিক্ষকরা ভবনের জন্য আবেদন করেছেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ভবন পরিদর্শনও করেছেন। তবুও বরাদ্দ আটকে আছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ডালিমা পঞ্চানন পলাশতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৪ শতাংশ জায়গাজুড়ে একটি টেকসই বহুতল ভবন ও খেলাধুলার মাঠ নির্মাণ হলে শুধু বিদ্যালয়ের নয়, পুরো এলাকার শিশু-কিশোরদের জন্য এটি হবে নিরাপদ ও আনন্দময় শিক্ষাঙ্গন।
এলাকাবাসী সিন্দু রাণী বলেন, আমাদের সন্তানরা এখানে লেখাপড়া করে। শিক্ষার মান ভালো, কিন্তু ভয় সবসময় লেগে থাকে। তাই আমরা চাই দ্রুত টেকসই ভবন হোক।
অর্ধশতাব্দীর ঐতিহ্য বহন করা এই বিদ্যালয়টি যেন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে না ঝুঁকে পড়ে— সেই প্রত্যাশায় আজ এলাকাবাসী, অভিভাবক, শিক্ষক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এক সুরে বলছেন:
ডালিমা পঞ্চানন পলাশতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাই একটি টেকসই বহুতল ভবন— নিরাপদ শিক্ষার স্বপ্নের জন্য।