
সাইফুল ইসলাম (রায়পুর উপজেলা প্রতিনিধি)
বাংলাদেশের ইসলামী অঙ্গনে এক সুপরিচিত ও প্রভাবশালী নাম সাইয়্যেদ আনোয়ার হুসাইন (Sayed Anwar Hossain)। তিনি একজন সুপ্রতিষ্ঠিত আলেম, ইসলামিক বক্তা, গবেষক এবং আহলে বাইতের সদস্য হিসেবে দেশব্যাপী সম্মানিত। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে তিনি ইসলামী জ্ঞানচর্চা, গবেষণা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরীনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বোর্ড অব গভর্নরস–এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৫৬ সালের ১ মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল গ্রামে। তাঁর পিতা আহমেদ তাহের জাবেরী ও মাতা হালিমা মেহের আলী মুন্সী—উভয়েই ধর্মীয় অনুশাসন, নৈতিকতা ও মানবিকতার শিক্ষা দানে পারিবারিক পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শৈশব থেকেই তিনি ইসলামি জ্ঞানের প্রতি গভীর অনুরাগী ছিলেন, যা পরবর্তী জীবনে তাঁর বৃহত্তর পরিচয়ের ভিত্তি তৈরি করে।
শিক্ষাজীবনের শুরুতে তিনি পড়াশোনা করেন হায়দারগঞ্জ আর. এম. কামিল মাদ্রাসাতে, যেখানে দাখিল, আলিম ও ফাজিল পর্যায় অতিক্রম করেন কৃতিত্বের সঙ্গে। পরবর্তীতে তিনি দেশের প্রাচীনতম দারুল উলুম সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা থেকে কামিল ডিগ্রি অর্জন করেন। অধ্যয়নের প্রতি তাঁর উৎসর্গ এবং গবেষণার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাঁকে নিয়ে যায় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সৌদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
শিক্ষা জীবনে তাঁর নেতৃত্বগুণ ছিল উল্লেখযোগ্য। তিনি ঢাকা আলিয়ার ছাত্র সংসদের সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি (জি এস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি যুক্ত ছিলেন জ্ঞানচর্চা, সাংগঠনিক উন্নয়ন এবং ইসলামি সভ্যতার গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডে।
বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর খুতবা, বক্তব্য ও ব্যাখ্যাগুলো সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। ইসলামের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গেছে। জ্ঞানপিপাসু মানুষ, গবেষক, ছাত্র এবং তরুণ আলেমদের কাছে তিনি অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।
তিনি শুধু বক্তা নন, বরং একজন শ্রদ্ধেয় গবেষক ও ইসলামী দার্শনিক। দেশের শীর্ষস্থানীয় মুফাসসিরদের সংগঠন বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরীন–এর প্রতিষ্ঠাকালীন উপদেষ্টা হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। কোরআন ও হাদিসভিত্তিক গবেষণায় তাঁর দক্ষতা এবং পরিশ্রম তাঁকে দেশের মুফাসসির মহলে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রে পরিণত করেছে।
ধর্মীয় পরিচয় অনুযায়ী তিনি একজন সম্মানিত আহলে বাইত সদস্য। তাঁর উপাধির মধ্যে রয়েছে – শায়েখ, সাইয়্যেদ, তাহের জাবেরী, যা তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্য ও জ্ঞান-গৌরবকে প্রকাশ করে। অনেকেই তাঁকে আওলাদে রাসূল এবং আনোয়ার হোসাইন আল মাদানী নামেও চেনেন।
দেশে ও বিদেশে তাঁর অসংখ্য বক্তৃতা, গবেষণামূলক কাজ, সেমিনার ও আলোচনাসভা ইসলামি জ্ঞানচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সমাজে শান্তি, সহনশীলতা, নৈতিকতা ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্য প্রতিষ্ঠায় তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর আত্মিক চিন্তা, মননশীল যুক্তি এবং গভীর পাণ্ডিত্য সাধারণ মানুষের হৃদয়ে ইসলামের প্রতি অনুরাগ জাগিয়ে তুলেছে।
ইসলামী চিন্তা, গবেষণা এবং সামাজিক উন্নয়নের যে ধারা তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন—তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে একটি মূল্যবান দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আলেম সমাজে তাঁর অবদান গভীর, এবং জাতির প্রতি তাঁর নিরন্তর শিক্ষা–দীক্ষা দেশকে সমৃদ্ধ করছে।