
মোহাম্মদ মামুন উদ্দিন (অনলাইন রিপোর্টার)
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় বিয়েবাড়িতে মাইক বাজানোর জেরে এক কন্যা, তার বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত ও আর্থিক জরিমানার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। গ্রাম্য সালিশের রায়ে ক্ষমা চেয়েও শাস্তি এড়াতে পারেননি ভুক্তভোগীরা।
জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় মেয়ের জামাইয়ের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম অটোরিকশাটিও জিম্মা করে রেখেছে স্থানীয় একদল প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ ঘটনায় স্থানীয় জনমনে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, সম্প্রতি ওই পরিবারের কন্যার বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ের আনন্দে সামান্য সময়ের জন্য মাইক ব্যবহার করে পরিবারটি। এ ঘটনায় প্রতিবেশী আফসারসহ কয়েকজন ক্ষুব্ধ হয়ে পরিবারের কাছে জবাব চান। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে তর্কে হাতাহাতির সৃষ্টি হয়।
পরে স্থানীয় প্রভাবশালী আলাউদ্দিন মাঝি, তছলিম, আনোয়ার মাঝি, সেন্টু ও রফিকসহ কয়েকজন সালিশদার একটি অনানুষ্ঠানিক বিচার সভা বসান। সেখানে কন্যাসহ পরিবারের কয়েক সদস্যকে ১৫ বেত দেওয়ার রায় দেওয়া হয় এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানাও চাপানো হয়।
কন্যার বাবা শাহজাহান বলেন,
“আমার মেয়ের বিয়েতে সখ করে মাইক বাজিয়েছিলাম। এজন্য আফসার, ছারোয়ার আর মালেক আমাদের সবাইকে মারধর করে। পরে সালিশ বসিয়ে বেতও মারে। ক্ষমা চাইলেও রেহাই দেয়নি। ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে। টাকা দিতে না পারায় আমার মেয়ের জামাইয়ের রিকশাটিও ধরে রেখেছে।”
তিনি আরও জানান, বিভিন্নজনের কাছে বিচার চাইতে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাননি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক সালিশদার বলেন,
“মাইক বাজানো নিয়ে ঝগড়ার সময় নাকি আফছারের ৫০ হাজার টাকা হারিয়ে যায়। যদিও আমরা তার প্রমাণ পাইনি। তারপরও সালিশে ৩০ হাজার টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়। মহিলাদের বেত দেওয়া হয়নি; পুরুষদের দেওয়া হয়েছে।”
সাগরিয়া ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক এসআই ফরহাদ হোসেন বলেন,
“বিয়েতে মাইক বাজানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। উভয় পক্ষকে আইনি ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তারা গ্রাম্য সালিশ করেছে। পরে আমাকে আর কিছু জানায়নি। কেউ অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আইনজ্ঞরা বলছেন, গ্রাম্য সালিশে বেত্রাঘাত, আর্থিক জরিমানা বা কারো সম্পদ আটক করার কোনো আইনগত ক্ষমতা নেই। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি এবং ফৌজদারি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
স্থানীয় সচেতন মহলও বলছে,
“মাইক বাজানোর মতো তুচ্ছ ঘটনায় এমন বর্বর আচরণ কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।”