মোঃ মিলন সরকার ( কালিয়াকৈর উপজেলা প্রতিনিধি ): গাজীপুর কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেলস্টেশন এখন শুধুই মাদকসহ নানা অপরাধের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিলো বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেলস্টেশন। কিন্তু কোনো ট্রেন না থামায় স্টেশনটি এখন জনমানবশূন্য। এখানে কর্মরত দুজন স্টাফ ট্রেন না থামায় শুধু ক্রসিংয়ের দায়িত্ব পালন করছেন তারা। অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণের ফলে যাত্রীর অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে ট্রেন চলাচল।
প্রতিদিন গাজীপুর শিল্পাঞ্চল, ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াতের ধারণা নিয়ে স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত তিন বছরে গড়ে প্রতিদিন মাত্র ৪৭ জন যাত্রী যাতায়াত করেন। গত আগস্ট মাস থেকে কোনো ট্রেন থামছে না এ স্টেশনে। তবে রেলস্টেশনটির রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা ও অন্যান্য খরচ মিলে বছরে ব্যয় হয় প্রায় ৩০ লাখ টাকা, যেখানে বার্ষিক আয় হয় মাত্র ৯ লাখ টাকার মতো।
রেল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১লা নভেম্বর, হাইটেক পার্কের পাশে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ এ স্টেশনটি উদ্বোধন করা হয়। ছয় বছর ধরে এখানে টাঙ্গাইল কমিউটার ও সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন থামত। প্রথম দিকে কিছু দিন ডেমু ট্রেন চললেও পরে তা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে এ স্টেশন দিয়ে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল ও উত্তরবঙ্গগামী ৪০টি ট্রেন চলাচল করে। তবে যাত্রী না পাওয়ায় এসব ট্রেন এখানে থামে না।
কালিয়াকৈর স্টেশনে বর্তমানে স্টেশনমাস্টার ও টিকিট বিক্রেতা মিলে দুজন কর্মচারী দায়িত্ব পালন করছেন। মাসিক বেতনভাতা, বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য রক্ষণাবেক্ষণ খরচসহ বছরে ৩০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়। অথচ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এ স্টেশন থেকে আয় হয়েছে মাত্র ১০ লাখ ৭২ হাজার টাকা। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা, আর ২০২০-২০২১ অর্থবছরে আয় ছিল ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, হাইটেক পার্ক কেন্দ্র করে ২০১৫ সালে স্টেশন নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়, যা রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের আদলে তৈরি করা হয়েছে। তবে অপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত হওয়ায় এখন কোনো কাজে আসছে না।
গত সোমবার দুপুরে দিকে দেখা যায়, কয়েকজন শিক্ষার্থী প্ল্যাটফর্মে ঘুরছেন, রেললাইন ধরে কেউ টিকটক ভিডিও বানাচ্ছেন। ষাটোর্ধ্ব লাল মিয়া নামে এক হকার পণ্যসামগ্রী পাশে রেখে মাছ ধরার জাল বুনছেন। তিনি বলেন, ট্রেন থামে না, তাই আয়-রোজগারের সুযোগও নেই।
তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী আজমল হোসেনের দাবি- এটি জনবহুল এলাকা। যাত্রী না পাওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। সারাদিন দুটি ট্রেন থামলে যাত্রী আসবে না, আরও বেশি করে ট্রেন যাত্রাবিরতি দিলে স্টেশনটি আলোর মুখ দেখবে। কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়গুলোতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারি সম্পদগুলো রক্ষা করা।
স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশনে কোনো ট্রেন থামে না, তাহলে এত টাকা খরচ করে বিলাসবহুল এ স্টেশন দরকার কি ছিল।একাব্বর হোসেন, রায়হান কবীর, আকলিমা আক্তার ও আনোয়ার হোসেন বলেন, এ স্টেশনে একটাও ট্রেন না থামায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চলাচলরত মানুষ। দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশনে এখন শুধু টিককট ও বিনোদনের কেন্দ্র। এছাড়াও নিরাপত্তা না থাকায় এখানে চুরি, ছিনতাই, মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে স্টেশনটি। উজ্জল হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি অচিরেই দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশনটি যেন সচল হয়।
এদিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না থাকায় নীরবে পড়ে থাকছে দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশনটি। ফলে এটাকে কেন্দ্র করে চুরি, ছিনতাই, মাদকের আখড়াসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এ স্টেশনে ১২ জন জনবল থাকলেও নেই নৈশপ্রহরী। নিরাপত্তার অভাবে চুরি হয়ে যাচ্ছে স্টেশনটির বিভিন্ন মালামাল। গত কয়েক দিন আগেও চুরি হয়ে গেছে স্টেশনের পানির পাম্প। সেখানে নানা অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় আতঙ্কে আছেন রেলস্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী। স্টেশনমাস্টার মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, এখানে আমরা মাত্র দুজন কর্মরত আছি। ট্রেন না থামায় শুধু ক্রসিংয়ের দায়িত্ব পালন করছি। নেই রেলওয়ে পুলিশসহ অন্য কোনো লোকজন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব কাউছার আহাম্মেদ জানান, এ স্টেশনে ট্রেন থামে না, এ বিষয়টি অবগত আছি। আর সেখানে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের বিষয়ে অবগত ছিলাম না। এখন যেহেতু অবগত হয়েছি,ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।