ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আলেয়া
মোঃ মিলন হক। কথাসাহিত্যিক
আলিম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে।সকাল সাড়ে আট টা থেকে রাত আট পর্যন্ত অফিস চলে। রাত আটটার পর অফিস ছুটি হয়।
সারাদিনের ক্লান্তির চাহনি নিয়ে; অফিস থেকে বের হয়ে। বের হয়ে ১১-১২ মিনিটের রাস্তা হাঁটা শুরু করে । অফিস থেকে হেঁটে ১৫ মিনিট গেলে রাস্তার মোড়।
এই ১১ -১২ মিনিট হাঁটার সময় দেখে, শহরের রাস্তার বিভিন্ন দোকানপাট।দোকানে- দোকানে মানুষের উপচেপড়া ভীড়। বিভিন্ন দোকানে বিভিন্ন রংয়ের লাইটের বাতির আলোয় আলোকিত শহর। রাস্তার পাশে ফুটপাতের দোকান গুলোতে মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার কাড়াকাড়ি।
হকারদের বিভিন্ন ডাক। গাড়ির তীব্র যানজট। রাত ৮ টায় শহরের রাস্তায় যানযট থাকে। এই পথ টুকু সহজে অতিক্রম করতে পারলে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে!
১৫ মিনিট আসার পর চৌরাস্তার একটা মোড় পায়। রাস্তার মোড়ের পূর্ব পার্শ্বে কয়েকটা চায়ের দোকান আছে। রাতে চায়ের দোকানে লোক জনের ভীড় তুলনামূলক নগন্য। এরপর চায়ের দোকানে গিয়ে,একটা বিস্কুট এবং এক কাপ চা খাই। চা শেষ করে,একটা সিগারেট ধরায়। সিগারেট টানতে টানতে যাত্রী ছাউনীতে আসে। যাত্রী ছাউনীতে একটা রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে সেখানে একটা ল্যাম্পপোস্ট রয়েছে ।
এরপর ৮:৩৫ এ বাস আসে।
আলেয়া একটি মোবাইল কোম্পানিতে চাকুরী করে। তার অফিস শুরু হয় সকাল ১০ টায়।সকাল ১০ থেকে রাত ৮ :২০ পর্যন্ত অফিস চলে।আলেয়া তার কলিগদের সঙ্গে গল্প করতে প্রতিদিন ছাউনীতে এসে পাঁচ- সাত মিনিট মতো বাসের অপেক্ষা করে।
আলেয়া দেখতে ভীষণ সুন্দরী।
আলেয়া গোলগাল আকৃতির এক অপরূপা।
চন্দ্রের চেয়েও তার উজ্জ্বলতা বেশি!তার রূপের বর্ণনা দেওয়া দুষ্কর! চোখ দুটো যেন কোন এক মায়াবী হরিণী!ডান গালে তিল, নিচের ঠোঁটের বা পার্শ্বের তিল। মুখের সম্মুখে একরাশ এলো চুল। ভ্রু গুলো কাজল কালো।তার হাসিতে গালে টোল পড়ে।এ যেন কোন কবির কবিতার কল্পনার নায়িকার রূপ!
একই বাসের যাত্রী হয়ে নিজ গন্তব্যে রওনা দেয়।
বাসে এতো ভীড় যে ,আলেয়া কোথাও না কোথাও বাসের মধ্যে বসার সুযোগ পায় কিন্তু আলিম কে প্রায় প্রতিনিয়ত দাঁড়িয়ে যাওয়া লাগে।
আলিম প্রায় প্রতিনিয়ত ছাউনী তে ল্যাম্প পোস্টের নিচে আলেয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। একদিন বৃষ্টির রাতে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়।
ছাউনীতে অনেক লোক লোক থাকায় আলিম ভিজে যাচ্ছে। আলেয়া তার ছাতা দিয়ে বলে , ধরুন ছাতাটা এতো রাতে ভিজে গেলে আপনার ঠাণ্ডা লেগে যাবে।
কিছুক্ষণ পর বাস আসলে সবাই বাসে উঠে ।
আলিম আলেয়াকে তার ছাতা দেয়। আলেয়া বাস থেকে নামে শেষের স্টোপে। আলিম আগেই নামে কারণ তার বাড়ি পার হয়ে বাস তিন কিলোমিটার দূরে যায়।
পরে দিন আলিম ল্যাম্পপোস্টর নিচে দাঁড়িয়ে আছে আলেয়া কাছে এলে আলিম বলে, আপনাকে প্রায় দেখি। আপনার নাম জানা হয় নি কখনও । আপনার নাম কি? কি করেন?
আলেয়া বলে, “আমার নাম আলেয়া। মোবাইল কোম্পানিতে জব করি।“
আলেয়া বলে, আপনার নাম কি? এবং কি করেন? আলিম বলে, “আমি আলিম। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে স্বল্প বেতনে জব করি।“
এভাবে পরিচয় হয় এবং প্রতিনিয়ত ল্যাম্পপোস্টের আলোর নিচে যাত্রীছাউনি তে দেখা হয়।
বাসের মধ্যে অনেক বৃদ্ধ লোক থাকে ,যারা বিভিন্ন জায়গায় চাকুরী করে। একে অপরের খোঁজ খবর নেওয়া এবং বাসের কন্ডাক্টর কে নিয়ে সবার ইয়ার্কি কৌতুহলে ভরপুর থাকে বাস।
বৃদ্ধরা একে অপরকে রাগানোর চেষ্টা করে।
সবার সাথে আলেয়ার খুব ভালো সম্পর্ক।
আলেয়াকে বাসে পেয়ে তারা যেন বাড়তি সুখ ও আনন্দ খুঁজে পাই। বাসের কন্ডাক্টর একজন রসিক মনের মানুষ সবাইকে হাসানোর চেষ্টা করে। সবাই সমস্বরে গান গাই বাসের মধ্যে।
প্রায় প্রতি দিন দেখা হয় কথা হয়।
একে অপরের নাম্বার নেয়।বাস আসার আগে, মাঝেমধ্যে বসে চায়ের আড্ডা দেয়।
আলিম আলেয়ার মাঝে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একদিন চায়ের কাপের বাষ্পীয় পানিতে ফু দিয়ে,আলিম আলেয়াকে তার মনের গোপন কথা বলে। আলিম জানে, “পৃথিবীতে অনাকাঙ্ক্ষিত সম্পর্ক গুলোর শুরুটা হয় খুবই মধুময় শেষ টা পুরোয় বিষাদ সিন্ধু!“
আলিম ভালোবাসি বলে,মাথা নিচু করে বিষণ্ণ মনে চা পান করে। আলেয়া কিছু না বলে, চা শেষ করে। দোকান থেকে উঠে, ল্যাম্পপোস্টের আলোয় দাঁড়িয়ে থাকে।
আলিম সিগারেট না ধরিয়ে উপরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আলিম মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ছিল। আলেয়া অনেক সুন্দরী তার প্রস্তাবে রাজি নাও হতে পারে।তাই বলে, তার জন্য জীবন ধ্বংস করা যাবে না। যদিও এই মুহূর্তে তার জন্য সিগারেট খাওয়া প্রয়োজন যেনো আলেয়া বুঝতে না পারে। তার না বলাতে আলিমের হৃদয়ে আঘাত লেগেছে সেজন্য আকাশের পানে চেয়ে আছে।
বাস এলে সবাই বাসে উঠে। আলিম রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। আলেয়া ডাক দিয়ে, বলে কই তাড়াতাড়ি উঠো বাস ছেড়ে দিবে। আলিম দৌড়ে বাসে আছে। আলিম জানে না আলেয়ার মনে কি চলে, শুধু এটা বুঝেছে যেহেতু তার পাশের সিটে জায়গা পেয়েছে সেহেতু তার মনে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে!