কাজী আনোয়ার হোসেন(স্টাফ রিপোর্টার)-জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা এবং নিহত ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। ‘নির্বাচন আগে নাকি সংস্কার আগে’ তা নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি না করে এখনি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করেছে সিপিবি। ‘সংস্কার’ শুধু মুখে বলে চলবে না।অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেছে দলটি। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশ থেকে দলটির কয়েক হাজার নেতাকর্মী জড়ো হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। দলটির সভাপতি মো. শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ থেকে আন্দোলনের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘রক্ত দেয়, জীবন দেয় সাধারণ মানুষ। অথচ তাদের স্বার্থ বাস্তবায়িত হয় না।’ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করতে এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় হয় সমাবেশ থেকে।
‘সংস্কারের জন্য নির্বাচন পরে, নাকি নতুন দল গঠন করার জন্য নির্বাচন বিলম্ব করা হচ্ছে’ এমন প্রশ্ন রেখে দলটির সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, ‘দেশে অতি দ্রুত নির্বাচন দরকার। নির্বাচন আগে নাকি সংস্কার আগে এসব নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। নির্বাচন আর সংস্কার সাংঘর্ষিক কোনো বিষয় নয়, এই দুটি বিষয় একে অন্যের পরিপূরক।’ ৫ আগাস্টের পর ‘গণতন্ত্রের শত্রু’ শেখ হাসিনার জায়গায় আন্দোলনকারীরা দাঁড়িয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিশৃঙ্খল অবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ চলছে মন্তব্য করে দলটির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘বর্তমান সরকার বিপ্লবী বা স্বাভাবিক সরকার নয়। অন্তর্বর্তী সরকার এই কথার মধ্য দিয়ে তারা তাদের কাজকে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে।’ আপনারাতো মনে হয় বলা শুরু করবেন ‘চিরদিন দরকার, সংস্কার পার্টির সরকার’ এসব বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ফেলা ‘খুবই অন্যায় কাজ’ হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সিপিবির সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘আমরা অন্যদের মতো ইতিহাসকে বিকৃত করতে চাই না। মুজিবের ছবি থাকবে। শেরে বাংলার ছবি, জিয়াউর রহমানের ছবি, কর্নেল তাহেরের ছবি থাকুক। কিন্তু আমার প্রশ্ন মওলানা ভাসানীর ছবি, কমরেড মণি সিংহের ছবি নাই কেন?’
আর এক মুহূর্ত দেরি না করে এখনি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় মিডিয়া এসব বিষয় নিয়ে অতিরঞ্জিত করে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করছে।’
আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে গিয়ে প্রিন্স বলেন, ‘ঐক্য গড়ে তোলার কাজ শুরু করবো। ২১ তারিখ থেকে দেশব্যাপী পদযাত্রা করবো। আমরা নতুন সংগ্রামের কথা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিবো।
‘সংস্কার’ কথাটি শব্দ চয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, রাজনৈতিক দল ও অন্যদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার দাবি জানিয়ে বক্তারা আরও বলেন, ‘সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কাজ দৃশ্যমান করুন।’
দেশের বাম-গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বক্তারা আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষের হতাশা কাটাতে হবে। ব্যবস্থা বদল ছাড়া মুক্তি নাই। আসুন, ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে আমাদের ঐক্য গড়ে তুলি। মানুষকে বিকল্প পথের সন্ধান দিয়ে সচেতন ও সংগঠিত করি।’
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকে কেউ যেন বিতর্কিত করতে না পারে, স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কুক্ষিগত করতে যাতে মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য নিজেদের সজাগ থাকতে হবে। পতিত স্বৈরাচার, লুটেরা, সাম্প্রদায়িক, আধিপত্যবাদী, সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তিকে রুখে দিয়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
এসব দাবিসহ মানুষের মুক্তির আন্দোলন বেগবান করতে সমাবেশ থেকে আন্দোলনের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। ১০ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় এবং ঐক্য গড়ে তোলার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারির পল্টন হত্যাকাণ্ড দিবস উপলক্ষ্যে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মরণ ও শপথ গ্রহণ। ২০ থেকে ২৭ জানুয়ারি দেশব্যাপী ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করা। এক হাজার কিলোমিটার পদযাত্রা করে সিপিবির কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগ করবেন। এছাড়া সপ্তাহব্যাপী এই কর্মসূচিতে সারাদেশে সভা-সমাবেশ, হাটসভা, জনসভা, মানববন্ধন ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হবে।