মোঃ ইয়াছিন শেখ (কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি)
কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটিতে অভ্যন্তরীণ বিরোধ এবং বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে সংগঠনের অন্তত ৫০ এর বেশি জন নেতাকর্মী একযোগে পদত্যাগ করেছেন। এই পদক্ষেপে জেলা ছাত্র রাজনীতিতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গত শনিবার (৩ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে জেলা কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মিয়া এবং সংগঠক রিয়াদ আহমেদ উল্লাসকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে একটি নোটিশ প্রকাশ করেন জেলা আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের পদত্যাগপত্র ছড়িয়ে দেন, যা দ্রুতই ভাইরাল হয়ে পড়ে।
বহিষ্কারের জন্য ‘সাংগঠনিক নীতি ও আদর্শবিরোধী কার্যক্রম’-এর অভিযোগ তুলে ইকরাম হোসেন ও সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ প্রকাশ করা হয়। যদিও মামুন মিয়ার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ নিয়ে রয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। সংগঠনের একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং যুগ্ম সদস্য সচিব দাবি করেছেন, মামুন মিয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশিত অডিও রেকর্ডটি তার কণ্ঠের সঙ্গে মেলেনি। এর ফলে বহিষ্কার সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায় ও ষড়যন্ত্রমূলক’ বলে উল্লেখ করে ৫০ জন নেতাকর্মী পদত্যাগ করেন।
একযোগে পদত্যাগ করেন শীর্ষস্থানীয় ৫০ নেতাকর্মী
পদত্যাগকারীদের মধ্যে রয়েছেন ৮ জন যুগ্ম আহ্বায়ক, ৮ জন যুগ্ম সদস্য সচিব, ৪ জন সংগঠক, ৩ জন স্বাস্থ্য সেলের সদস্য এবং আরও ২৪ জন সাধারণ সদস্য। তাঁদের অনেকেই ফেসবুকে তাদের পদত্যাগপত্র প্রকাশ করেন, যেখানে তাঁরা বর্তমান নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন।
এক পদত্যাগপত্রে যুগ্ম সদস্য সচিব সুমাইয়া শাওন লিখেছেন, “মিথ্যা অভিযোগ ও যথাযথ প্রমাণ ছাড়া সিনিয়র নেতাদের বহিষ্কার করা হয়েছে—এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি এর প্রতিবাদ জানিয়ে নিজ দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করছি।”
পদত্যাগ করা নেতাদের মধ্যে অন্যতম, বহিষ্কৃত সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মিয়া বলেছেন, “যে সংগঠন গড়েছিলাম শোষণবিরোধী অবস্থান থেকে, সেখানে আজ ষড়যন্ত্রের উৎসব চলছে। ব্যক্তিগত দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই আমাদের মাইনাস করার চেষ্টা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই পদত্যাগ কোনো বিদ্রোহ নয়—এটা সত্যের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান। নেতৃত্বের নামে অন্যায়কে আর প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।”
বহিষ্কারের ঘটনাটি সামনে আসার আগেই গত ৩০ এপ্রিল তাড়াইল উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব পারভেজ ইসলামের পদ স্থগিত করা হয়। দলীয় আদর্শবিরোধী কার্যক্রমের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এসব ঘটনাই বুঝিয়ে দেয় যে, সংগঠনের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা এবং নেতৃত্বের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভাজন তৈরি হয়েছে।
এদিকে, চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় কমিটি কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার ৩২১ সদস্যের অনুমোদন দেয়। সেই নবগঠিত কমিটির মাত্র তিন মাসের মাথায় এ ধরনের সংকট সামনে আসায় সংগঠনের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিশোরগঞ্জ জেলা শাখায় একযোগে ৫০ জন নেতাকর্মীর পদত্যাগ শুধু একটি সংগঠনের অন্তর্দ্বন্দ্বই প্রকাশ করে না; বরং এটি একটি আদর্শিক আন্দোলনের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়েও সংশয় সৃষ্টি করেছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি কীভাবে এই সংকট সামাল দেয় এবং আগামী দিনে নেতৃত্ব কাঠামোয় কী ধরনের সংস্কার আনা হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।