নাবিল সাদিক, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি
আজ ২৮ জুন, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ও সমাজসেবক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্মদিন। ১৯৪০ সালের এই দিনে তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার ধারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে তিনি দারিদ্র্য বিমোচনে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
শৈশব থেকেই অধ্যয়ন ও চিন্তাচর্চায় অগ্রসর ইউনূস শিক্ষা জীবন শুরু করেন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষার জন্য যান এবং অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সময়কার একটি অভিজ্ঞতা তার চিন্তার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। জোবরা গ্রামের দরিদ্র নারীদের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি জানতে পারেন, মাত্র অল্প কিছু টাকার অভাবে তারা বাঁশের আসবাব তৈরি করে লাভ করতে পারছেন না। তাদের ঋণের অভাব পূরণে ইউনূস নিজের অর্থ থেকে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান শুরু করেন। এখান থেকেই গড়ে ওঠে পরবর্তীকালে গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণা।
১৯৮৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করা গ্রামীণ ব্যাংক মূলত দরিদ্র ও প্রথাগত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য বিকল্প ঋণ সুবিধা প্রদান করে। বিশেষ করে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলাই ছিল এই ব্যাংকের অন্যতম লক্ষ্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংক শুধুমাত্র ক্ষুদ্রঋণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; এটি কৃষি, মৎস্য, সেচ, প্রযুক্তি ও যোগাযোগ খাতেও প্রসারিত হয়। এর অন্যতম সাফল্য ছিল গ্রামীণফোনের সঙ্গে যৌথভাবে “পল্লী ফোন” প্রকল্প, যা গ্রামীণ নারীদের হাতে মোবাইল ফোন পৌঁছে দিয়ে তাদের আয়ের উৎস তৈরি করে দেয়।
ড. ইউনূসের এই উদ্ভাবনী উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়। ২০০৬ সালে তিনি ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি লাভ করেন স্বাধীনতা পুরস্কার, রামোন ম্যাগসেসে, বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার, প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম, কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেলসহ বহু আন্তর্জাতিক সম্মাননা। বিভিন্ন দেশের ৭০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে।
তার রচিত বই ‘Banker to the Poor’, ‘Creating a World Without Poverty’ এবং ‘A World of Three Zeros’ আজ বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিবিদ, উদ্যোক্তা ও শিক্ষার্থীদের জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হয়।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রমাণ করেছেন, অর্থনীতি কেবল লাভের জন্য নয়—এটি মানুষের জীবন বদলের এক শক্তিশালী উপায়। তার জন্মদিনে জাতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছে এক পথপ্রদর্শককে, যিনি দারিদ্র্য ও অসাম্য দূরীকরণের এক অনন্য আদর্শ স্থাপন করেছেন।