আব্দুল আজিজ, নাচোল সংবাদদাতা।
বুকভরা সাহস আর চোখভরা স্বপ্ন নিয়ে আকাশ জয়ের যাত্রায় বেরিয়েছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর। আজ ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত দিন—প্রথম সলো ফ্লাইট। আকাশে একাই ওড়ার পূর্ণ অনুমতি পেয়েছিলেন। সেই দিনটির জন্য প্রস্তুতি চলছিল বহুদিন ধরে স্বপ্ন, অধ্যবসায় আর আত্মত্যাগের অনবদ্য ফলাফলস্বরূপ।কিন্তু কী নিষ্ঠুর পরিহাস!স্বপ্ন পূরণের দিনেই নিয়তির ছোবল। আকাশ ছোঁয়ার মুহূর্তেই মাটিতে ঝরে পড়ল এক উজ্জ্বল তরুণ প্রাণ। একা ওড়ার প্রথম চেষ্টাটাই হয়ে গেল তাঁর শেষ উড্ডউন ।সোমবার দুপুরে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। পাইলট তৌকির ইসলাম সাগর গুরুতর আহত হন। দ্রুত তাঁকে সিএমএইচে নেওয়া হয়। কিন্তু বিকেল চারটায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।এই ফ্লাইটটি ছিল তাঁর জীবনের প্রথম একক উড়ান। প্রশিক্ষণের নির্ধারিত ধাপগুলো সফলভাবে অতিক্রম করে একজন পাইলট যখন একাই বিমান চালানোর যোগ্য বিবেচিত হন, তখনই তাঁকে সলো ফ্লাইটের অনুমতি দেওয়া হয়।সেই বিশেষ ফ্লাইটের জন্য বিমান ঘাঁটিতে ছিল জলখেলা, মিষ্টি বিতরণ ও উল্লাসের প্রস্তুতি। সহকর্মীরা অপেক্ষা করছিলেন হাসিমাখা মুখে সাগরকে বরণ করার। অথচ কিছুক্ষণ পর সেই হাসিমুখগুলো ভরে ওঠে অশ্রুতে।তৌকির ইসলাম সাগরের জন্ম রাজশাহীতে। শৈশবে প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষে ভর্তি হন ল্যাবরেটরি স্কুলে। এরপর পাবনা ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকেই শুরু হয় পাইলট হওয়ার প্রস্তুতি। মেধা, শৃঙ্খলা আর দেশপ্রেম নিয়ে তিনি যুক্ত হন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৩৩তম ব্যাচে।পারিবারিক সূত্র জানায়, মাত্র এক বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়। স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। বাবা তোহরুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী। থাকেন রাজশাহীর উপশহরে। গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামে। ছোট বোন সৃষ্টি ইসলাম বারিন্দ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস-এর শিক্ষার্থী।দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই রাজশাহী র্যাব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সাগরের পরিবারকে বিমানে করে ঢাকায় আনে। সিএমএইচে পৌঁছে ছেলের নিথর দেহ দেখে ভেঙে পড়েন মা-বাবা, স্ত্রী ও স্বজনেরা। তাঁদের কান্নায় যেন স্তব্ধ হয়ে যায় হাসপাতালের পরিবেশ।সাগরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকাবহ হয়ে ওঠে পুরো কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রাম। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবাই ছুটে আসেন তাঁদের প্রিয় সন্তানের দাদার বাড়িতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তৌকিরের ছবি।এক বৃদ্ধ বলেন,ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই আলাদা ছিল। মাটির ছেলে হয়েও আকাশের পাখি হয়ে গেল। আজ সেই পাখি মাটিতেই পড়ে রইল।