নিজস্ব প্রতিবেদক ১৩ অক্টোবর ২০২৫ বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করেছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “দ্য সিভিল অ্যাভিয়েশন রুলস, ১৯৮৪” এর বিধি ১৬(১) অনুসারে জনস্বার্থে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এই ঘোষণার মাধ্যমে কক্সবাজার এখন দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, অন্যান্য তিনটি হলো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ঢাকা), শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (চট্টগ্রাম) এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (সিলেট)।
২০২১ সাল থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে রানওয়ে সম্প্রসারণ, নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, বোর্ডিং ব্রিজ, উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও যাত্রীসুবিধা সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। বর্তমানে বিমানবন্দরের রানওয়ে ৬,৭৭৫ ফুট থেকে ৯,০০০ ফুট পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হচ্ছে, যাতে বড় আকারের আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ সহজে অবতরণ করতে পারে। নতুন টার্মিনাল ভবনটি বছরে প্রায় ১৮ লাখ যাত্রী সেবা দিতে সক্ষম হবে বলে জানানো হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মর্যাদা পাওয়ার ফলে কক্সবাজার এখন সরাসরি বিদেশি পর্যটক ও আন্তর্জাতিক যাত্রীদের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করবে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে পর্যটন খাতে বিপুল প্রবৃদ্ধি আসবে এবং আঞ্চলিক অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মর্যাদা দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা পর্যটন উন্নয়নের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছি। এখন বিদেশি পর্যটকরা সরাসরি কক্সবাজারে নামতে পারবেন।”
যদিও এখনো বিমানবন্দরের কিছু অবকাঠামোগত কাজ চলমান রয়েছে, যেমন Instrument Landing System (ILS), পূর্ণ রানওয়ে লাইটিং ও পার্কিং সুবিধা; তবে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী বছরের শুরুতেই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানায়, কিছু এয়ারলাইন ইতোমধ্যে কক্সবাজার থেকে আঞ্চলিক রুটে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু হলে কেবল পর্যটন নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের আকাশপথে সংযোগ আরও শক্তিশালী হবে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, এবং সামুদ্রিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও হোটেল-মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “বিদেশি পর্যটকরা যদি সরাসরি কক্সবাজারে আসতে পারেন, তাহলে পুরো অঞ্চলের অর্থনীতি চাঙা হয়ে উঠবে।”সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেলেও, কক্সবাজার বিমানবন্দরের পূর্ণ কার্যক্রম শুরু হবে সব অবকাঠামো সম্পন্ন হওয়ার পর।এই ঘোষণা বাংলাদেশের বিমান পরিবহন খাতে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে — যেখানে সমুদ্রবেষ্টিত কক্সবাজার এখন আন্তর্জাতিক পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ার অপেক্ষায়।
সূত্র: প্রজ্ঞাপন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়; বাংলাদেশ ট্রিবিউন, ঢাকা টাইমস, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, জাগো নিউজ, বাংলাদেশ মনিটর, অবজারভার অনলাইন।