
বিশেষ প্রতিনিধি :
গোপালগঞ্জ জেলার মধ্যে নির্বাচনী এলাকা হিসাবে গোপালগঞ্জ-১ আসন সবচেয়ে বড়। জেলার মুকসুদপুর উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন ও মুকসুদপুর পৌরসভা এবং কাশিয়ানি উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন মিলে এই সংসদীয় আসন গঠিত হয়েছে। সংসদীয় আসন হিসেবে এটির নাম্বার ২১৫। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৫ শত ১০ জন। এর মধ্যে মুকসুদপুরে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৫ শত ৬২ জন এবং কাশিয়ানিতে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯ শত ৪৮ জন।মুকসুদপুরে পুরুষ ভোট ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯ শত ৬৫ জন এবং মহিলা ভোট ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫ শত ৯৭ ভোট। কাশিয়ানিতে পুরুষ ভোট ৬২ হাজার ৮ শত ৫৬ জন এবং মহিলা ভোট ৬৩ হাজার ৯২ জন। মুকসুদপুরে ভোট কেন্দ্র ৯৬ টি এবং কাশিয়ানিতে ৪২ টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। মুকসুদপুরে স্থায়ী ভোট কক্ষ ৫২৭ টি এবং অস্থায়ী ভোট কক্ষ ২৪ টি। কাশিয়ানিতে স্থায়ী ভোট কক্ষ ২৫৭ টি এবং অস্থায়ী ভোট কক্ষ ১২ টি।
পতিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের একসময় এ আসনে ছিলো দোর্দণ্ড প্রতাপ। চলমান ভিন্ন রাজনৈতিক ধারায় ভোটের রাজনীতি কেমন হবে তা বলা মুষ্কিল বলে অনেকে মনে করছেন। তবে, যেহেতু কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেনা সেহেতু কমবেশি সব প্রার্থীই আওয়ামী লীগের ভোট পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ চালাচ্ছে। কেউ কেউ সরাসরি আর কেউবা গোপনে। এবারেরর নির্বাচনে মুকসুদপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম খায়রুল বাকী মিয়ার দুই ছেলে আশ্রাফুল আলম ওরফে শিমুল এবং নাজমুল আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। আশ্রাফুল আলম ইতিপূর্বে মুকসুদপুর পৌরসভার মেয়র ও মুকসুদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য লে. কর্ণেল (অব:) ফারুক খানের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে। তার প্রমান পাওয়া যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ও স্টীল ছবিতে। এসব ভিডিও ও ছবিতে আশরাফুল আলম ওরফে শিমুল ও নাজমুল আলমকে দেখা যায়। ফারুক খানের প্রশংসা করে বক্তব্য দিতেও দেখা গেছে ওই ভাইকে। আশরাফুল আলম ওরফে শিমুল বর্তমানে কারাগারে থাকলেও তার ভাই নাজমুল আলম প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই আসনে আরেক প্রার্থী কারাগারে থেকে নির্বাচন করছেন। তিনি হলেন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গন অধিকার পরিষদ মনোনীত প্রার্থী কাবির মিয়া। তিনি আওয়ামী লীগ আমলে মুকসুদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তারা আপন চাচা ও শ্বশুর ছিলেন মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং মুকসুদপুর পৌরসভার মেয়র। কাবির মিয়াও এলাকায় দোর্দণ্ড প্রতাপ খাটিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতা হয়েও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে শেষ রক্ষা করতে পারেননি।
গোপালগঞ্জ-১ আসনে এবার বিএনপি প্রার্থী হয়েছেন মো: সেলিমুজ্জামান মোল্লা। তিনি বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক। ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই সেলিমুজ্জামান নিজেকে গোপালগঞ্জ-১ আসনে বিজয়ী হওয়ার দৌড়ে শামিল হয়েছেন। তবে রাজনৈতিক কারনে অসংখ্য মানুষ কারাগারে যাওয়ার কারনে তাকেই দায়ী মনে করে সবাই। এতে তার বিরুদ্ধে অনেকে কথা বলার সু্যোগ পাচ্ছেন। ভোটের হিসেবনিকেষ এসব কারনে অনেকেই মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এদিকে প্রার্থীদের মধ্যে মোটামুটি ক্লিন ইমেজ নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম. আনিসুল ইসলাম ভোটারদের মনে ঠাই করে নিয়েছেন। অনেকে বলাবলি করেন আনিসুল ইসলাম ওরফে ভুলু মিয়া তার ক্লিন ইমেজকে সাথে নিয়ে যদি সব দিক ঠিক রাখতে পারেন তবে তিনি জয়লাভ করবেন। বদলে যাওয়া চলমান রাজনীতির এই সময়ে ভোটাররা বিতর্কিত প্রার্থীদের চেয়ে ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকে জিতিয়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে সবাই আশা করে।
গোপালগঞ্জ-১ আসনে অন্যান্য প্রার্থীরা তেমন সাড়া ফেলতে না পারলেও প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন,মুহাম্মদ আব্দুল হামিদ মোল্লা (জামায়াতে ইসলাম), সুলতান জামান খান( জাতীয় পার্টি -এরশাদ), মো. জাকির হোসেন (জনতার দল), মোহাম্মদ মিজানুর রহমান (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) , প্রিন্স আল আমিন (এবি পার্টি) , ইমরান হোসেন আফসারি( বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস), নিরদ বরণ মজুমদার (কমিউনিস্ট পার্টি ) এবং কাইয়ুম আলী খান (স্বতন্ত্র) ।