১২ দলীয় জোটের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের পেছনে গোপন উদ্দেশ্য আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাঠামো সংশোধনের পেছনে কোনো অদৃশ্য উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, “কোনো কাল বিলম্ব না করে সঠিক সময়ে নির্বাচন দিন, তাহলে সবাই সম্মান জানাবে।”
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে ১২ দলীয় জোটের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালাটি “রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্ততা” শীর্ষক আলোচনার ভিত্তিতে আয়োজিত হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদি আমিন এতে ৩১ দফার বিভিন্ন দিক বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন।
সরকার পরিচালনায় সমন্বয়হীনতার অভিযোগ
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অভিযোগ করেন, সরকারের ভেতরে চরম সমন্বয়হীনতা বিরাজ করছে। তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা এক কথা বলেন, তার সহকারীরা আরেক কথা বলেন। এতে বোঝা যায়, সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো ঐক্য নেই।”
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যদি কেউ ৬-৮ আগস্টের মধ্যে ওই বাড়ি ভেঙে পুকুর তৈরি করত, তাহলে এতদিন কেউ কিছু বলত না। কিন্তু ছয় মাস পর কেন এই আলোচনার জন্ম হলো? যদি আমরা আজ একটি ভুল রীতি চালু করি, তাহলে ভবিষ্যতে যে কারও বাড়ি-ঘর আক্রান্ত হতে পারে।”
৩১ দফাকে জাতীয় সনদ হিসেবে অভিহিত করলেন নেতারা
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ৩১ দফা কেবল বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটি একটি জাতীয় সনদ, যেখানে ৬২টি রাজনৈতিক দল ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে কাজ করছে।
১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “৩১ দফা এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম আলোচিত বিষয়। এটি সমগ্র জাতির আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। আমরা যদি ক্ষমতায় আসি, তাহলে প্রতিটি দফা বাস্তবায়ন করব।” তিনি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার ওপর জোর দেন।
নেতাদের ক্ষোভ ও শঙ্কা
বাংলাদেশ এলডিপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “বিগত ১৫ বছর আমরা বিশ্বাস করতাম, একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করা সম্ভব হবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের শঙ্কিত করছে। কিছু লোকের উসকানিতে পুরো জাতি অস্থিতিশীলতার দিকে ধাবিত হচ্ছে।”
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, “আমরা ৫ আগস্টের গণআন্দোলনের মাধ্যমে এক ভয়ঙ্কর স্বৈরাচারী শাসন উৎখাত করেছি। এই শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রের প্রতিটি কাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন আমাদের কাজ হলো রাষ্ট্র মেরামত করা, যা ৩১ দফার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।”
নেতাদের অঙ্গীকার
কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজসহ জোটের শীর্ষ নেতারা।
তারা বলেন, “৩১ দফা শুধু বিএনপির নয়, এটি জনগণের স্বার্থ রক্ষার দলিল। আমাদের সবাইকে জনগণের কাছে যেতে হবে এবং এই কর্মসূচির গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে।”
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ১২ দলীয় জোটের সহস্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।