মুহাম্মদ হাবিব (চরফ্যাশন প্রতিনিধি):ভোলার চরফ্যাশনে চরম বিপাকে ব্যবসায়ীসহ পথচারীরা ২০কোটি টাকার বাস টার্মিনাল এখন ভূতুড়ে বাড়ীতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত দুই মাস যাবত অদৃশ্য কারনে বাস টার্মিনাল থেকে কোন বাস আসা যাওয়া না করায় অযত্নে অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে আধুনিক বাস টার্মিনাল। পাশাপাশি বাসটার্মিনালটি পরিত্যক্ত হওয়ায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে হয়ে উঠে মাদক সেবীদের অভয়ারণ্য। দলবেঁধে বসে মাদকের আখড়া ও জুয়ার আসর। জুয়ারী ও মাদক সেবীদের আনাগোনার কারনে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। বাসটার্মিনালে বাস আসা যাওয়া বন্ধ করে বাজারের ভিতরে বাসের যাত্রী উঠা-নামা ও ষ্টেশন স্থাপন করায় তীব্র যানযটে পড়েছে চরফ্যাশন বাজার ব্যবসায়ীসহ পথচারীরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সুশিল সামাজের ব্যাক্তি ও পথচারীদের দাবী আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়েছে আধুনিক মানের এই বাস টার্মিনালটি।চরফ্যাশন পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী, পৌরসদরের যানযট নিরসনের জন্য সদর থেকে দুই কিলোমিটার দুরে পৌরসভার অর্থায়নে তিন একর জমির ওপর প্রায় ২০কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় অত্যাধুনিক মানের একটি আধুনিক বাস টার্মিনাল। এই টার্মিনালে রয়েছে সাড়ে ৭ হাজার স্কয়ার ফুঁটের উন্নতমানের কাঁচে মোড়ানো তিনতলা ভবন। যে ভবনে সাধারণ যাত্রীদের বিশ্রামাগার ছাড়াও অত্যাধুনিক সুবিধার ভিআইপি বিশ্রামাগার, রেস্টুরেন্ট, মসজিদ, হলরুম, মিটিং রুম, দশটি চায়ের স্টল, পর্যাপ্ত শৌচাগারসহ প্রত্যেক রুটের জন্য পৃথক টিকিট কাউন্টারের ব্যবস্থা।জানা যায়, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০১৮ সালে টার্মিনালটি নির্মান কাজ শেষ হওয়ার পর ওই বছরের ২রা আগষ্ট বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর ৭ বছর উৎসব মুখর পরিবেশে টার্মিনালে বাস আসা-যাওয়া করলেও আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর মুখ থুবড়ে পড়েছে বাস টার্মিনালটি। বাস চলাচল ও আসা যাওয়া না থাকায় নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক মানের এই টার্মিনালটি।এতে অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে অবকাঠামোসহ গুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্র। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, চারতলা বিশিষ্ট বাস টার্মিনালের ভবনের কোটি টাকার আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাস টার্মিনালের চারপাশসহ মূল ভবনের বেশ কিছু স্থানে ময়লা-আবর্জনায় ভাগাড়ে পরিণত হয়ে গেছে।ভিতর বাহিরে জমে আছে ময়লা আবর্জনার স্তুপ। এছাড়াও টার্মিনালটির পশ্চিম পাশে সাধারণ মানুষ অবাধে বিচরণ করায় স্থানীয়রা ময়লা ফেলার কারনে বাস টার্মিনাল জুড়ে রয়েছে ময়লার স্তুপ। টিকিট কাউন্টারগুলোতে জমেছে ধুলোর স্তুপ। পৌরসদর জুড়ে যাত্রীবাহী বাসের অবাধ বিচরণের কারনে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা দূর্ঘটনা। পাশাপাশি সড়ক জুড়ে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানোর কারনে সৃষ্ট যানযটে পথচারীদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন পৌরসদরের ব্যবসায়ীরা।বাস টার্মিনালের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম জানান, বাস টার্মিনাল চালু হওয়ায় ওই খানে একটি দোকান দিয়েছিলেন তিনি। যাত্রীদের সমাগমে মুখর থাকায় ভালো বেঁচা বিক্রি করে ৫ জনের সংসার চলতো তার। বাসটার্মিনাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনিসহ ওই খানের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।বাজার ব্যবসায়ী শাহারিয়ার জানান, বিগত সময়ে পৌরসদর বাজারের বাহিরে বাসটার্মিনালে বাস থাকা ও ওই টার্মিনাল থেকে ভোলাগামী যাত্রীবাহী বাস আসা যাওয়ার কারনে বাজার ছিলো যানযট মুক্ত। কিন্ত বাস মালিক সমিতির খামখেয়ালীর কারনে ফের বাজার জুড়ে শুরু হয়েছে যাত্রীবাহী বাসের বিচরন। বাজারের ভিতরে দুটি ষ্টেশন জুড়ে বাস রাখা এবং বাজারের ভিতরে যাত্রী উঠানামা করার কারনে সৃষ্টি হয় তীব্র যানযট। এতে চরম বিপাকে পড়েছে বাজারের ব্যবসায়ীসহ পথচারীরা। প্রতিনিয়ত ঘটছে নানান দূর্ঘটনা। বাসটার্মিনালে বাস ফিরিয়ে নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবী জানান বাজারের ব্যবসায়ীরা।
বাস মালিক সমিতির আঞ্চলিক চরফ্যাশন শাখার সাধারন সম্পাদক মোঃ সবুজ মিয়া জানান, তেলের দাম বৃদ্ধির কারনে বাসের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এতে সদর থেকে অটোরিকশায় বাসটার্মিনাল যেতে যাত্রীসাধারনের আরো অতিরিক্ত ৫০ টাকা বেশীগুনতে হয়। এতে করে বিপাকে পড়তে হয় যাত্রীদের। এবং সদর থেকে দুরত্ব হওয়ার কারনে অনেক সময় ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। সবদিক বিবেচনা করে পৌর সদর বাজার সংলগ্ন বাসষ্টান্ডেই তারা বাস রেখে সব রুটে চলাচল করছেন।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক রাসনা শারমিন মিথি জানান, বিগত বছরে বাসটার্মিনালটি পৌরসভা ইজারা দিয়েছে। ওই ইজারার মেয়াদ এখনও চলমান রয়েছে। তবে যেহেতু বাস মালিকরা তাদের নিজস্ব স্টান্ডে বাস রেখে পরিচালনা করছেন সেহেতু পৌরসভার পক্ষ থেকে বাসমালিক সমিতির সাথে আলোচনা করে ফের ওই বাস টার্মিনালে বাস স্থানান্তর করার জন্য আলোচনা চলছে।চরফ্যাশন থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান হাওলাদার জানান, দুই মাস যাবত বাসটার্মিনালটিতে কোন বাস আসা যাওয়া না করায় ওই এলাকায় কিছু অপরাধ প্রবনতা দেখা দেয়ার মতো আশংকা রয়েছে। সেইদিক বিবেচনা করে রাতে প্রায় সময় ওইসব এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।