লেখক: ইমরান বিন সুলতান
শীতের এক সন্ধ্যায়, ব্যস্ত শহরের ভীড়ের মাঝখানে পরিচয় হয়েছিল আমাদের। তার চোখে ছিল প্রশ্ন, ঠোঁটে ছিল রহস্য।
আমার নিঃসঙ্গতার মধ্যে সে যেন এক অনাহূত অতিথি হয়ে এলো—কিন্তু অচেনা হয়েও অদ্ভুত আপন।
আমি বিশ্বাস করলাম, হয়তো অবশেষে
আল্লাহ্ আমাকে কাউকে দিয়েছেন, যার মাঝে আমি হারিয়ে যেতে পারি।
প্রথমদিকে আমাদের কথাগুলো ছিল ছোট—
কেমন আছো, কি করছো, খেয়েছো তো?
তারপর এগুলোই হয়ে উঠলো দিনের সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন।
আমি তাকেই ঘিরে সাজাতে লাগলাম আমার সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা—আমার ভবিষ্যৎ পর্যন্ত।
সে বলত, “তুমি ছাড়া আমি ভাবতেই পারি না”।
আর আমি তার প্রতিটি শব্দকে হৃদয়ের ভিতরে জায়গা দিতাম
ধর্মগ্রন্থের মতো বিশ্বাস করে।
কিন্তু সময়ের সাথে মানুষের মুখোশও খুলতে শুরু করে।
এক সময় দেখি, আমি কেবল তার সুবিধার জন্য দরকারি—ভালোবাসা নয়, দায়িত্ব নয়, শুধু প্রয়োজন।
যখন সে ক্লান্ত, তখন আমি;
যখন সে একা, তখন আমি;
কিন্তু যখন আমি ভাঙা, তখন সে ব্যস্ত।
আমি একটা সময় ভেবে নিয়েছিলাম—
শুধু দিল দিয়েই যদি কেউ কারো হয়,
তবে সে হয়তো একদিন বুঝে যাবে আমার গুরুত্ব।
কিন্তু না, তার দরকার ছিলো আমার অনুভূতি নয়—
আমার সময়, আমার উপস্থিতি, আমার সাড়া।
একদিন সে স্পষ্ট করেই বলল,
“তুমি খুব ভালো, কিন্তু এখন আমার অন্য কিছু দরকার।”
আমি বোকার মতো তাকিয়ে রইলাম তার মুখের দিকে।
তাকে বলা হলো না—
তুমি শুধু আমার ‘ভালো’ দেখেছো,
আমার কষ্ট দেখোনি, আমার কান্না শোনোনি,
আমার ভালোবাসার গভীরতা বোঝোনি।
আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো,
যা আমি তোমার নামে লিখে রেখেছিলাম,
তুমি নিজ হাতে গলা টিপে মেরে ফেললে।
আমার স্বপ্নগুলোকে জীবন্ত কবর দিলে।
তারপর একদিন বলে দিলে—
“ভুলে যাও, এগিয়ে যাও”।
আমি এখন আর মরতেও ভয় পাই না।
কারণ আমি জানি, মৃত্যুতেও যদি কোথাও তাকে দেখি,
সে হয়তো সেখানেও বলবে,
“একটু সময় দাও, আমার প্রয়োজন আছে…”
আমি জানি, আমি একা নই।
এই পৃথিবীতে অনেকেই আছে, যারা
ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসার বদলে
ব্যবহার পাওয়া মানুষগুলোর তালিকায় পড়ে যায়।
তাদের জন্যই আমার এই লেখা—
যারা প্রিয় হতে চেয়েছিল,
কিন্তু হয়ে উঠেছিল শুধু প্রয়োজন।
শেষকথা:
ভালোবাসা নিঃস্বার্থ হয়,
প্রয়োজন নয়।
তুমি যদি সত্যিকারের ভালোবাসতে,
আমার কাঁধে প্রয়োজনের ভার চাপাতে না।
তুমি শুধু একটু বুঝলেই পারতে—
তোমার চাওয়া ছিল প্রয়োজন,
আমার দেওয়া ছিল জীবন।