লেখক: ইমরান বিন সুলতান
নাঈম… বাবা…”—বলে হঠাৎ করেই আর্তনাদ করে উঠল। ততক্ষণে রাহাত সাহেব নিথর দেহে মাঠের মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন।
বাবার এমন দৃশ্য দেখে মুহূর্তে বোঝার আগেই নাঈমের মনে জেগে উঠল এক অপরাধবোধ—কে মারল বাবাকে? সে তাকিয়ে দেখল এক ছায়ামূর্তিকে দ্রুত দূরে সরে যেতে। বুকভরা রাগ আর প্রশ্ন নিয়ে ছুটে গেল সেই ছায়ার পিছু, কিন্তু ধরা গেল না তাকে। তবে নাঈম তার মুখটি দেখে ফেলেছে—চেনা মুখ, চিরচেনা এক ছায়া মানব!
মনেমনে প্রতিজ্ঞা করল নাঈম—“তোমায় পরে দেখে নেব… কিন্তু আগে বাবাকে বাসায় নেই।”
দ্রুত ছুটে গেল বাবার কাছে। বাবার নিথর দেহটি সে একা বহন করতে পারবে না—মা-কে ফোন দিলে হয়তো কান্না শুরু হয়ে যাবে, বাড়ি জুড়ে রোল উঠবে। তাই পকেট থেকে ফোন বের করল নাঈম।
নাঈম: আসসালামু আলাইকুম।
ইমাম সাহেব: ওয়ালাইকুম আসসালাম। হ্যাঁ, নাঈম বল।
নাঈম: হুজুর… আমার বাবা মাঠে পড়ে আছেন। একটু আসবেন, দয়া করে? (কণ্ঠে কান্নার রেশ)
ইমাম সাহেব: আচ্ছা, আমি আসছি।
ইমাম সাহেব এসে দেখলেন—রাহাত সাহেবকে তুলতে নাঈম প্রাণপণে চেষ্টা করছে, কিন্তু কিছুতেই পারছে না। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ইমাম সাহেব তখনই এলাকার মজিদ মিয়াকে ফোন করলেন। কিছুক্ষণ পর মজিদ মিয়া তাঁর সিএনজি নিয়ে চলে এলেন। সবাই মিলে রাহাত সাহেবকে নিয়ে রওনা হলেন ঢাকা মেডিকেলের উদ্দেশ্যে।
এদিকে, ইসরাত বেগম বাড়িতে অস্থির হয়ে ভাবছেন—”এত দেরি করছে কেন আজ? এমন তো কখনো করে না!” চিন্তার বেড়াজালে যেন দিশেহারা হয়ে উঠছেন তিনি। হঠাৎ মনে হলো—”একটা ফোন করে দেখি না!”
কিন্তু তার আগেই বেজে উঠল ফোনটি—অপর পাশে নাঈম।
নাঈম: মা… তুমি কি একা একটু ঢাকা মেডিকেলে আসতে পারবে?
ইসরাত বেগম: কেন বাবা? কী হয়েছে তোমাদের? (চোখ ভেজা গলায় প্রশ্ন)
নাঈম: পরে বলব… আগে আসো, প্লিজ?
এই কথা শুনে ইসরাত বেগম আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না—ফুটে উঠল কান্না। কান্নার শব্দ শুনে আশপাশের সবাই ছুটে এলেন—“কি হয়েছে? কি হয়েছে?” চারদিক থেকে প্রশ্নবানে ভেসে গেল বাড়ি।
সকালের স্নিগ্ধতা যেন বিষাদে রূপ নিল আজ। কয়েকজন প্রতিবেশী মিলে রওনা হলেন মেডিকেলের পথে।
এদিকে, রাহাত সাহেবকে নিয়ে যাওয়া হলো অপারেশন থিয়েটারে। সময় যেন থমকে আছে। বহুক্ষণ পর এক চিকিৎসক বেরিয়ে এলেন। তার মুখের অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছিল—ভেতরে যা ঘটেছে, তার জন্য নাঈম প্রস্তুত ছিল না…
চলবে…….