সেলিম হোসেন মায়া (খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি):
খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ বিতরণে অনিয়ম,বৈষম্য ও স্বজন-প্রীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে মন্ত্রণালয়ের নগদ অর্থসহ খাদ্যশস্য বরাদ্দে চরম বৈষম্যে করছে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও যুগ্ম সচিব কংকন চাকমা।
এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করেছে সচেতন মারমা ও ত্রিপুরা সমাজ নামে একটি সংগঠন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের মুখপাত্র রুমেল মারমা ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন,‘ পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট সাবেক রাষ্ট্রদূত ও শেখ হাসিনার মনোনীত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে থাকা অবস্থায় সুপ্রদীপ চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। যা দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ও দুঃখজনক বিষয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জনাব সুপ্রদীপ চাকমা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রকল্প বণ্টন, খাদ্যশস্য ও অর্থ বরাদ্দসহ সকল ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে একচেটিয়াভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি খুনি হাসিনার দোসর আওয়ামী লীগ নেতা ও নৌকা মার্কার অবৈধ জনপ্রতিনিধিদের বরাদ্দ ও প্রকল্প দিয়ে পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এতে শুধু মারমা ও ত্রিপুরা নয়, অন্যান্য পাহাড়ি ও বাঙালি জনগোষ্ঠীরাও মারাত্মকভাবে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ৫ দফায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুই হাজার দুই শ তিয়াত্তর মেট্রিক টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চাকমা সম্প্রদায়ের মধ্যে ১৮শ ৯২ মেট্রিক টন, মারমাদের ১শ ২ মেট্রিক, ত্রিপুরাদের ৬৬ মেট্রিক টন এবং বাঙালি ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মাঝে ২শ ১৩ মেট্রিক খাদ্যশস্য দেয়া হয়। যা চরম বৈষম্যমূলক।’
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন,‘পঞ্চম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মামলার এজাহারভুক্ত আসামী আওয়ামী লীগ নেতাদের। এর মধ্যে রয়েছে মহালছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাজাই মারমাকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪২ মেট্রিক টন। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জ্ঞান দত্ত ত্রিপুরাকে ৪২ মেট্রিক টন। খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তপন বিকাশ ত্রিপুরােেক ৪২ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৬ জুন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকের অনুকূলে প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টন বরাদ্দ দেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়। সেই বরাদ্দে খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি কালায়ন তালুকদারকে বিশ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রদীপ চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদ থেকে অপসারণ ও কংকন চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিবের পদ থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান। এছাড়া পার্বত্য তিন জেলার প্রকল্প ও বরাদ্দগুলো ন্যায্য ও সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে সমবণ্টনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন আঞ্চলিক পরিষদ, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান পদে পার্বত্য চট্টগ্রামের দ্বিতীয়-তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মারমা ও ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠী থেকে প্রতিনিধি নিয়োগের দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান বৈষম্য দূরীকরণে আগামী সাত দিনের মধ্যে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার আমাদের চার দফা দাবি মেনে না নিলে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় লাগাতার সড়ক ও নৌ-পথ অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির পালনের হুশিয়ারি দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সূর্য কিরণ ত্রিপুরা (কার্বারী), প্রশান্ত ত্রিপুরা, মোচাই মারমা, উক্রাচিং মারমা, সীমা ত্রিপুুরা ও তনয় ত্রিপুরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।