
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
এস ডব্লিউ সাগর তালুকদার সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের এক ব্যবসায়ীর মৃতদেহ ভারতীয় সীমান্ত পিলার সংলগ্ন কাঁটাতারের ওপারে পাওয়া গেছে। নিহত ব্যবসায়ীর নাম আব্দুল আহাদ (৪৫), তিনি নরসিংপুর ইউনিয়নের রগারপাড় গ্রামের মৃত আফতর আলীর পুত্র।
এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড দাবি করে নিহতের পরিবার ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের দিকে ইঙ্গিত করেছে। এই ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ৯টার দিকে নিহত আব্দুল আহাদকে তাঁর ব্যবসায়িক বন্ধু একই ইউনিয়নের দ্বীনেরটুক গ্রামের মৃত আতাউর রহমানের পুত্র নজরুল ইসলাম (৪৬) বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। এরপর তিনি আর বাড়ি ফিরে আসেননি। পরদিন, অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর কোনো সন্ধান না পাওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়ারাবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
এর কিছু সময় পর জানা যায়, ভারতীয় সীমানায় কাঁটাতারের বেড়ার কাছে মেঘালয় রাজ্যের সিলং জেলার সাইগ্রাফ থানার কালারটেক বস্তির একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আব্দুল আহাদের মৃতদেহ পড়ে আছে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। সেখান থেকে নিহতের এক পায়ের জুতা, অন্য আরেকজনের একটি জুতা এবং একটি গ্যাসলাইট (দিয়াশলাই) উদ্ধার করা হয়। তবে, খবর লেখা পর্যন্ত ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেনি।
নিহতের বড় পুত্র নাইম হাসান, বড় ভাই পারুক মিয়া, এবং দুলাভাই আব্দুল কাইয়ুম বাদশাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা দাবি করেছেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাঁদের অভিযোগ, বাংলাদেশে হত্যা করে খুনিরা অত্যন্ত কৌশলে মৃতদেহটি ভারতীয় সীমানার ওপারে ফেলে এসেছে।
তাঁরা জানান, নিহত আব্দুল আহাদের মূলত ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বেশ কিছু দ্বন্দ্ব ছিল। বিশেষত, নরসিংপুর বাজার ইজারা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কয়েকজনের বিরোধ ছিল, যা নিয়ে অতীতে একাধিকবার বিচার-সালিশও হয়েছে। এছাড়া, তিনি চেলা নদীর বালু মহাল ইজারার অংশীদার এবং অন্যান্য ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। পরিবারের সুস্পষ্ট দাবি, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
শোকার্ত পরিবার দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। এদিকে, পুত্রশোকে নিহতের অশীতিপর মা নেওয়ারুন নেছার কান্না থামছে না, পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এখনো লাশ উদ্ধার হয়নি ঘটনাটি তদন্তাধীন। সন্দেহভাজন একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং লাশের ময়নাতদন্তের পর হত্যার প্রকৃত কারণ ও ধরন নিশ্চিত হওয়া যাবে।