মোঃ মামুন সেখ(স্টাফ রিপোর্টার): শীতের আগমনে ব্যস্ত সময় পার করছে সিরাজগঞ্জ কাজিপুর উপজেলার কম্বল পল্লীর কারিগররা৷ শীতের শুরুতেই এ উপজেলার প্রায় অর্ধ শতাধিক গ্রামে রাত-দিন ব্যস্ত সময় পার করছেন কম্বল তৈরির কারিগররা ।
যমুনা নদীর ভাঙন কবলিত কাজিপুরের শিমুলদাইড় বাজার, ছালাভরা, বরশীভাঙ্গা, সাতকয়া, কুনকুনিয়া, পাইকরতলী, গাড়াবেড়, মাইজবাড়ি, চালিতাডাঙ্গা, মেঘাই, শ্যামপুর, নয়াপাড়া, গাঁন্ধাইলসহ প্রায় ৫০টি গ্রামে গার্মেন্টসের ঝুটে নানা রং বেরংয়ের বাহারি কম্বল তৈরি হচ্ছে।
এরসঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার পরিবার। পা মেশিন ও ফ্লাডলক মেশিন দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের তৈরি কম্বল জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে৷ এই কাজের সাথে যুক্ত অধিকাংশই হচ্ছে মহিলা কারিগররা৷
কম্বল শিল্পের যাত্রা শুরু হয় প্রায় ১৫-২০ বছর পূর্বে চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নাধীন শিমুলদাইড় বাজারের কয়েকজন দর্জি ঢাকা হতে কম্বলের জুট/ছোট ছোট কম্বলের কাপড় এনে সেলাই মেশিনে জোড়া/সেলাই দিয়ে কম্বল তৈরী করত এবং তা আশেপাশে গ্রাম/ইউনিয়নে বিক্রি করত। তারপর অন্যান্য ব্যবসায়ীরা দেখলো এ ব্যবসা সম্ভবনাময়। তখন থেকে এলাকার অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও এ কম্বল ব্যবসায়ে মনোযোগ দেন এবং তারাও ঢাকা থেকে কম্বলের ছোট ছোট কাপড় এনে কম্বল তৈরী করে বিক্রি শুরু করেন। তারপর থেকে কাজিপুর উপজেলায় কম্বল ব্যবসা ব্যপক প্রসার লাভ করে। যখন দেখা গেল কম্বল ব্যবসায় প্রচুর লাভ তখন এলাকার ধনী/বৃত্তশালীরাও এ ব্যবসায় বিনিয়োগ শুরু করেন।
চালিতাডাঙ্গার ব্যবসায়ী আশরাফ আলী বলেন, আমি এই ব্যবসায় ৫-৬ বছর আগে যুক্ত হয়েছি৷ প্রায় দুই শতক আগে থেকে শিমুলদাইড় এর বেশ কয়েকজন ঢাকা গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ থেকে গার্মেন্টস পরিত্যক্ত জুট ক্রয় করে নিয়ে এসে তারা সেগুলো সেলাই করেই কম্বল তৈরি করতো৷ আমি তাদের সাথে কথা বললে তাঁরা আমাকে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেন তারপর থেকে এখন আমিও এই ব্যবসার সাথে যুক্ত রয়েছি৷
বড়শিডাঙ্গা গ্রামের কম্বল কারিগর রোখসানা বেগম বলেন, কম্বল তৈরি করার জন্য কম্বল কারখানা থেকে আমাদের বাড়িতে গার্মেন্টস থেকে ক্রয় করা জুট আমাদের কাছে পৌছে দেয়৷ আর আমরা সেই ছোট ছোট টুকরো কাপড় কে সেলাই মেশিনের মাধ্যমে সেলাই করে সেগুলো দিয়ে আমরা কম্বল তৈরি করি এবং আমাদের পারিশ্রমিক হিসেবে প্রতি কম্বল প্রতি ৩০-৪০ টাকা করে দেওয়া হয়৷ আমরা বাড়ির কাজের পাশাপাশি দৈনিক ৮-১০টি কম্বল তৈরি করতে পারি৷
মাইজবাড়ি গ্রামের কম্বল ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান বলেন, আমরা প্রথমত শুধু মাত্র জুট কাপড় দিয়ে কম্বল তৈরি করতাম৷ এখন তার পাশাপাশি আমরা ফ্রেশ কম্বল ও তৈরি করি৷ আমাদের কাছে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কম্বল পাওয়া যায়৷ আর এখন শুধুমাত্র নিজ জেলাতেই নয় বরং দেশের বেশ কিছু জেলায় এই কম্বল রপ্তানি করে থাকি৷ উত্তরবঙ্গে যেহেতু শীত তুলনামূলক একটু বেশি তার জন্য আমাদের তৈরিকৃত অধিকাংশই উত্তরবঙ্গের জেলা গুলোতেই বিক্রি হয়ে থাকে৷