সাহিদুল ইসলাম)স্টাফ রিপোর্টার)
মালেকা খাতুন, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের একজন নারী, ১৯ বছর আগে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে গৃহকর্মীর কাজে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি শোষণ ও অবিচারের শিকার হন। গত ১৩ বছর ধরে দেশে ফেরার জন্য তিনি নিরন্তর চেষ্টা করলেও পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আটকে রাখার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
যে সন্তানদের জন্য তাঁর এই কষ্ট, সেই সন্তানদের মুখ আর দেখা হচ্ছিল না। একপর্যায়ে, ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সহায়তায় অবশেষে তিনি দেশে ফিরে সন্তানদের কাছে আসতে সক্ষম হন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁর সন্তানদের সাথে মিলিত হওয়ার মুহূর্তটি ছিল অত্যন্ত আবেগঘন।
২০০৬ সালে জেদ্দায় গৃহকর্মীর কাজে যাওয়া মালেকা খাতুন প্রথমে অপ্রত্যাশিতভাবে কঠিন পরিশ্রমের কাজ এবং কম বেতনে কাজ করতেন। একবার দেশে ফিরলেও পরে আর তাঁকে দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। তাঁর সন্তান সোনিয়া ও স্বপন অনেক জায়গায় চেষ্টা করেও মাকে ফেরাতে ব্যর্থ হন।
পরবর্তীতে, সাংবাদিক সাইফুল রাজিবের মাধ্যমে ব্র্যাক মাইগ্রেশন সেন্টারের সেবা সম্পর্কে জানতে পেরে তারা মায়ের প্রত্যাবাসনের জন্য কার্যক্রম শুরু করেন। ব্র্যাক মাইগ্রেশন সেন্টারের কর্মীদের প্রচেষ্টায় সৌদি আরবের বিভিন্ন দপ্তর এবং দূতাবাসের সহযোগিতায় মালেকা খাতুনকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জানান, মাইগ্রেশন সেন্টারের কর্মীরা পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মালেকা খাতুনের প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু করেন। একাধিক দপ্তরের সহায়তায় তাঁকে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়।
মালেকা খাতুনের সন্তান সোনিয়া খাতুন বলেন, “মাকে ফিরে পাবো এমন আশা আমরা ছেড়েই দিয়েছিলাম। আজ ব্র্যাক এবং সাইফুল ভাইয়ের জন্য আমরা মাকে ফিরে পেয়েছি। আমরা সবার কাছে কৃতজ্ঞ।”
ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টার গত আট বছরে ৩৫ হাজারেরও বেশি প্রবাসীকে সহায়তা দিয়েছে এবং ২০২৪ সালে ৪০ জন প্রবাসীকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ধার করেছে।
আল-আমিন নয়নসহ একটি দক্ষ দল এই কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তিনি বলেন, “প্রবাসে সংকটে থাকা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা থেকেই আমরা কাজ করছি। যে কেউ বিপদে পড়লে ব্র্যাক মাইগ্রেশন সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”