সেলিম হোসেন মায়া (খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি):
জেলার পানছড়ি উপজেলার দুর্গম ও প্রত্যান্তাঞ্চল গুলিতে পাহাড়ের প্রধান উৎসব বৈসাবি শুরু হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ এক নিয়মে পালন করলেও পাহাড়ে পালন করা হয় ভিন্নভাবে। উৎসব মূখর পরিবেশে চাকমাদের ফুল বিজু,মারমাদের সাংগ্রাই,ত্রিপুরাদের হারি বৈসুক এর মধ্য দিয়ে বৈসাবি উৎসবের শুভ সূচনা। ৫- ৮ দিনব্যাপী ব্যাপক উৎসবে পাহাড় এখন আনন্দে মাতহারা হয়ে থাকবে।
শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরে সূর্য উদয়ের আগ থেকে উপজেলার ধুদকছড়া, বরকলক, মধু মঙ্গল পাড়া, চেঙ্গী,পুজগাং ও শান্তিপুর রাবার ড্যাম সমুহে চেঙ্গী নদীর চরে ও তার আশপাশের বিভিন্ন খাল ও ছড়ায় পুরো এলাকার জুরে বর্ণাঢ্য গণ শোভাযাত্রা করে৷ গঙ্গা দেবীর উদেশ্যে বাহারী রঙের ফুল দিয়ে প্রার্থনা করতে বৈসাবি উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুভ সূচনা করে চাকমা – ত্রিপুরা সম্প্রদায়। এ দিনটি চাকমাদের ফুল বিজু নামেও পরিচিত।
শুক্রবার সকালে ত্রিপুরা সম্প্রদায় শোভাযাত্রা করে, আগামী কাল রবিবার মারমা সম্প্রদায় ও পরশু সোমবার বাঙ্গালী ও প্রশাসনের শোভাযাত্রা রয়েছে এবং সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন আয়োজকরা। এছাড়াও ঐতিহ্যবাহি জলখেলা অনুষ্ঠান রয়েছে।
রাবার ড্রাম ফুল বিজু উৎস উৎযাপন কমিটির সভাপতি প্রনয় কুমার চাকমা বলেন, চাকমা লোকরীতির বিশ্বাস, পুরাতন বছরের দুঃখ গ্লানি ও পাপাচার থেকে মুক্তির জন্য গঙ্গা দেবতার উদ্দেশে ফুল পুজার মাধ্যমে পুরাতন বছরকে বিদায় জানালে নতুন বছর সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা দেবে। তাই ফুল বিজুর দিন ভোর থেকে বাড়ির পাশের নদী ও খালে গিয়ে প্রার্থনারত হয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় জানায় চাকমা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বয়সী নর নারী। তবে এখন ফুল বিজু শুধুমাত্র চাকমা সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ নেই। মারমা, ত্রিপুরা ও স্থানীয় বাঙালীরাও অংশ নিচ্ছেন ফুল বিজুতে।
ফুলবিজু প্রার্থনা শেষে তরুণ তরুণীরা মেতে ওঠেন আনন্দ উৎসবে। নদীতে স্নান শেষে বাড়ি গিয়ে বায়ো জ্যেষ্ঠদের প্রণাম করে। ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাজসজ্জা শেষে প্রস্তুতি চলে অতিথি অ্যাপায়নের। উপজাতীয় গ্রামগুলোতে চলছে বিভিন্ন গ্রামীণ খেলাধুলাও।
প্রিন্সিপাল সমির দত্ত চাকমা, সুব্রত চাকমা সহ অনেকে বলেন, প্রতি বছরে ফুল পুজা উৎসবের অধিকাংশ মানুষ ড্যাম এলাকায় একত্রিত হই। পুরোনো সব গ্লানি মুছে দিতে গঙ্গা মায়ের উদেশ্যে আমরা ফুল পুজার মাধ্যমে উৎসবটি পালন করে থাকি। আগামীকাল থেকে প্রতিটি ঘরেই পালন করা হবে মূল বিজু।