মোঃ নোমান (সৌদি আরব প্রতিনিধি)

সৌদি আরব রিয়াদ — হজ্জ এবং সমসাময়িক উন্নয়নে সক্ষমতা শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে রবিবার জেদ্দায় ৪৯তম গ্র্যান্ড হজ্জ সিম্পোজিয়াম শুরু হয়েছে। হজ্জ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত এই সিম্পোজিয়ামটি সিনিয়র স্কলারস কাউন্সিল এবং কিং আব্দুল আজিজ ফাউন্ডেশন ফর রিসার্চ অ্যান্ড আর্কাইভসের অংশীদারিত্বে ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্ডিত ও গবেষকদের একটি বিশিষ্ট দলকে একত্রিত করেছিল।

হজ্জ ও ওমরাহ মন্ত্রী তৌফিক আল-রাবিয়াহ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন, সিম্পোজিয়ামটিকে একটি ইসলামী বুদ্ধিবৃত্তিক প্ল্যাটফর্ম হিসাবে বর্ণনা করেন যা ইসলামের এই মহান স্তম্ভের তাৎপর্য তুলে ধরতে এবং এর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মাত্রাকে শক্তিশালী করতে বিশিষ্ট চিন্তাবিদ এবং পণ্ডিতদের একত্রিত করে।

ডঃ আল-রাবিয়াহ উল্লেখ করেন যে এই বছর মক্কা শহর এবং পবিত্র স্থানগুলির জন্য রয়েল কমিশন দ্বারা স্পনসরিত অবকাঠামো প্রকল্প সহ বেশ কয়েকটি কর্মসূচি এবং উদ্যোগের সূচনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৭০,০০০ বর্গমিটার ছায়াযুক্ত এলাকা, ২০,০০০ গাছ রোপণ এবং তীর্থযাত্রীদের আরাম ও নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য রাবার ওয়াকওয়ে নির্মাণ।

স্বাস্থ্যসেবা প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী একটি নতুন জরুরি হাসপাতাল, ১৫টি অ্যাম্বুলেন্স ইউনিট, ৭১টি দ্রুত হস্তক্ষেপ কেন্দ্র এবং ৬৪টি দ্বিতল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থাপনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি মক্কা এবং পবিত্র স্থানগুলিতে পরিবহন ব্যবস্থাপনার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক মডেল হিসেবে জেনারেল ট্রান্সপোর্ট সেন্টারের উদ্বোধনেরও ঘোষণা করেন। এই পরিকল্পনায় বাস এবং হারামান হাই-স্পিড রেলওয়েকে একটি নমনীয় এবং দক্ষ ব্যবস্থায় একীভূত করা হয়েছে।

ডঃ আল-রাবিয়াহ আরও বলেন যে, গ্র্যান্ড মসজিদ ও মসজিদে নববী বিষয়ক জেনারেল প্রেসিডেন্সি একটি উন্নত অপারেশনাল প্যাকেজের মাধ্যমে তার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অডিওভিজুয়াল সরঞ্জামের উন্নয়ন, শিশু যত্ন কেন্দ্রের উন্নয়ন এবং হজযাত্রীদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ এবং উন্নত পরিষেবা নিশ্চিত করার জন্য পরিকল্পিত পরিষেবা।

দুই পবিত্র মসজিদের খাদেমের বিশেষ উপদেষ্টা এবং কিং আব্দুল আজিজ ফাউন্ডেশন ফর রিসার্চ অ্যান্ড আর্কাইভস (দারাহ) এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান প্রিন্স ফয়সাল বিন সালমানও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। তিনি প্রয়াত বাদশাহ আব্দুল আজিজ কর্তৃক সৌদি আরবের একীকরণের পর থেকে দুই পবিত্র মসজিদ এবং হজের প্রতি রাজ্যের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতির উপর জোর দেন। তিনি উল্লেখ করেন যে হজযাত্রীদের সেবা করা সর্বদা একটি পবিত্র সম্মান, একটি জাতীয় কর্তব্য এবং সৌদি নেতৃত্বের প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব, নাগরিকরা এই মিশনে অবদান রাখতে পেরে গর্বিত।

প্রিন্স ফয়সাল হজযাত্রীদের আগমন থেকে প্রস্থান পর্যন্ত তাদের সাথে থাকা প্রধান অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং মানবিক পরিষেবার কথা তুলে ধরেন। তিনি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কিং আব্দুল আজিজ ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত হজ ও দুই পবিত্র মসজিদের ইতিহাস ফোরামের উদ্বোধনেরও ঘোষণা করেন। এই ফোরামটি একটি বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে যা দুটি পবিত্র মসজিদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে প্রচার করে এবং বিশ্বব্যাপী পণ্ডিতদের বিনিময় ও গবেষণাকে উৎসাহিত করে।

সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি, সিনিয়র স্কলারস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ইফতার জন্য জেনারেল প্রেসিডেন্সির সভাপতি শেখ আব্দুল আজিজ আল-শেখ সিম্পোজিয়ামে তার পক্ষে সিনিয়র স্কলারস কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল শেখ ফাহাদ আল-মাজেদের বক্তব্যের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন। তিনি উল্লেখ করেন যে চার দশকেরও বেশি সময় আগে শুরু হওয়া এই পবিত্র সিম্পোজিয়ামটি হজ এবং বৃহত্তর ইসলামী বিষয় সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি অন্বেষণ করেছে।

শেখ আব্দুল আজিজ জোর দিয়ে বলেন যে এই বছরের প্রতিপাদ্য, ইসলামী আইনশাস্ত্রে “ক্ষমতা” ধারণার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, সমসাময়িক উন্নয়নের আলোকে এর ব্যবহারিক এবং আইনি প্রভাবগুলি তুলে ধরে। আলোচনার লক্ষ্য ছিল হজের কার্য সম্পাদনকে সহজতর করা এবং পণ্ডিতদের সংলাপ এবং চিন্তাশীল ব্যাখ্যার মাধ্যমে ইসলামী আইনের উদ্দেশ্যগুলিকে সমুন্নত রাখা।