লেখক: ইমরান বিন সুলতান::- কথার আঘাত এমন এক অস্ত্র, যা চোখে দেখা যায় না, তবুও মনে রক্তাক্ত ক্ষত সৃষ্টি করে। এই আঘাতে শরীরের কোনো অংশে চিড় ধরে না, কোনো ব্যান্ডেজও প্রয়োজন হয় না, কিন্তু হৃদয়ের গভীরে শূন্যতার জন্ম হয়। মানুষের মন কখনো শূন্য থাকে না, সেখানে ভালোবাসা, আশা কিংবা হতাশার দাগ জমা হয়। কথার আঘাত সেই দাগগুলোকে আরও গভীর করে তোলে, যেন কেউ অদৃশ্য ছুরির আঘাতে চিরে দিয়েছে হৃদয়ের পাতা।
শব্দের গঠন সহজ, কিন্তু তার প্রভাব অসীম। কেউ যখন শীতল শব্দ ছুঁড়ে দেয়, তখন সেই শব্দের ভারে ভালোবাসা গলে যায়, সম্পর্ক ভেঙে যায়। কথা ফুরিয়ে যায়, কিন্তু ক্ষত থেকে যায়। ক্ষত শুকালেও দাগ হয়, আর সেই দাগ বুকের মধ্যে তীব্র জ্বলতে থাকে, যেন অবিরাম এক নীরব আগুন।
কথার আঘাত কখনো স্নায়ুর মত স্পর্শকাতর হয়—একটি ভুল শব্দই অশ্রু ঝরাতে যথেষ্ট। কখনো তা পাহাড়ের মত ভারী হয়—বোঝা যায় না কীভাবে সেই ভার বহন করা যায়। আর কখনো তা অবহেলার মত ঠান্ডা—কিছু না বলেও যে কথা বলা যায়, তা মানুষ বুঝতে পারে কষ্টের মাঝে।
কথার গুরুত্ব বুঝতে গেলে তা ব্যবহার করার আগে ভাবতে হয়, কারণ সেই ক্ষত সহজে ভুলে যাওয়া যায় না। যে কথায় বিষ থাকে, তা আত্মাকে বিষাক্ত করে। যে কথায় অবহেলা থাকে, তা আত্মবিশ্বাসকে ভেঙে দেয়। আর যে কথায় তাচ্ছিল্য থাকে, তা ভালোবাসাকে বিষিয়ে দেয়।
তাই, কথা বলা এক শিল্প। শব্দের মাধ্যমে কেউ পারে জীবনকে সাজিয়ে তুলতে, আবার কেউ পারে তা ধ্বংস করে দিতে। এমনকি একটাই কথা মানুষকে বাঁচাতে পারে কিংবা চিরতরে নিঃশেষ করে দিতে পারে। মনে রাখা উচিত—কথা যেমন সুতো দিয়ে সম্পর্ক বোনে, তেমনই ভুল সময়ে বলা কিছু কঠোর শব্দ তা ছিঁড়ে ফেলতে পারে।
কথার আঘাত, তাই সবচেয়ে তীক্ষ্ণ এবং ভয়ংকর অস্ত্র। এটি বুলেটের মতো দ্রুত বিদ্ধ করে, কিন্তু বুলেটের ক্ষত যেমন সময়ের সাথে শুকিয়ে যায়, কথার আঘাতের ক্ষত তেমনটা হয় না। কারণ এই ক্ষত আত্মার, আর আত্মার কোনো সেলাই হয় না।
শুধু একটি কথাই যথেষ্ট মানুষকে নতুন করে গড়ে তুলতে, আবার একটি কথাই যথেষ্ট তাকে তছনছ করে দিতে। তাই বলার আগে ভাবা জরুরি—তোমার বলা শব্দগুলো কারও বুকের ভেতর জমে থাকা জমাট কষ্ট বাড়িয়ে দেবে, নাকি তার হৃদয়ে শান্তির সুর তুলবে।