কলমে: ইমরান বিন সুলতান
মানুষ, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। তার মনন, চিন্তা, অনুভব আর সহমর্মিতার গুণে সে অন্য সব প্রাণীর চেয়ে আলাদা। কিন্তু তবুও মানুষই আবার কখনো হয়ে ওঠে নিষ্ঠুর, অবিবেচক, অবহেলাকারী। অবহেলা—একটি শব্দ, যার ভেতরে লুকিয়ে থাকে অসংখ্য না বলা বেদনা, নিঃসঙ্গতা আর আত্মার নিঃশব্দ কান্না। সমাজের প্রতিটি স্তরেই অবহেলা এক নীরব ছায়ার মতো ছড়িয়ে আছে—কখনো পরিবারের এক কোণে, কখনো সমাজের প্রান্তে, কখনো বা সম্পর্কের গভীরে।
অবহেলার রূপ
মানুষের অবহেলা বিভিন্ন রূপে ধরা দেয়। বাবা-মা যখন সন্তানদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের আবেগ-অনুভূতি থেকে দূরে সরিয়ে নেয়, তখন সন্তান বুঝে যায়—মমতার জায়গায় এক অদৃশ্য দেয়াল গড়ে উঠেছে। বৃদ্ধ পিতা-মাতার দিকে কেউ আর তাকায় না, যেন তারা বোঝা হয়ে গেছে সংসারের। এখানেই জন্ম নেয় অবহেলা, যেটা কেবল শারীরিক নয়, বরং মানসিকভাবে আরো গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে।
একজন শিক্ষক যখন মেধাবী ছাত্রের প্রতি যত্নবান হলেও পিছিয়ে পড়া ছাত্রটির প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন, তখন সেই অবহেলা একজন সম্ভাবনাময় প্রাণকে ধ্বংস করে দেয়। কর্মক্ষেত্রে, বন্ধুত্বে, এমনকি প্রেম-ভালোবাসার বন্ধনেও অবহেলার দাহে সম্পর্কগুলো জ্বলে যায় নিঃশব্দে।
অবহেলার পরিণতি
অবহেলা মানুষকে নিঃসঙ্গ করে তোলে। যাকে অবহেলা করা হয়, তার হৃদয়ে জন্ম নেয় আত্মপ্রশ্ন, আত্মঅবিশ্বাস। “আমি কি তবে মূল্যহীন?” — এই প্রশ্ন তার মনে গেঁথে যায় বিষের মতো। অবহেলিত মানুষ ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, অনেক সময় মানসিক বিপর্যয়েও ভোগে। সমাজে প্রতিনিয়তই দেখা যায়, প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ শুধুমাত্র অবহেলার শিকার হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে।
পরিত্রাণের পথ
অবহেলার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে প্রয়োজন সহানুভূতি, মমতা ও সচেতনতা। প্রতিটি মানুষ চায় ভালোবাসা, স্বীকৃতি ও গুরুত্ব। আমাদের সমাজে যদি আমরা একে অপরের প্রতি সংবেদনশীল হই, তাহলে অবহেলার কষ্ট অনেকটাই কমে আসবে। সম্পর্কগুলো হবে গভীর, সমাজ হবে মানবিক, আর জীবন হবে অর্থবহ।
উপসংহার
মানুষের অবহেলা একটি নিরব বিষ, যা সম্পর্কের শেকড় গিলে ফেলে ধীরে ধীরে। অথচ একটু ভালোবাসা, সামান্য যত্ন, ছোট্ট একটি সহানুভূতির হাত সমাজের অন্ধকার কোণেও আলো জ্বালাতে পারে। অবহেলা নয়, বরং হৃদয়ের দরজা খুলে দেওয়া হোক—সেখানে থাকুক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর মানবতার স্নিগ্ধ ছায়া।