ইমরান বিন সুলতান
একটি বোনের আর্তনাদ আমার হৃদয়কে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তাঁর মুখে উচ্চারিত কয়েকটি শব্দ যেন কোটি কোটি মুসলমানের আত্মাকে প্রশ্নের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেছিলেন—
“আমার স্বামী শাহাদাত বরণ করেছেন, আমার সন্তানের পা কেটে গেছে—সেও শহীদ হয়েছে। আমি তাকে আমার হিজাব দিয়ে জড়িয়ে রেখেছিলাম…
মুসলমানদের চেয়ে আমার হিজাব আমাকে বেশি রক্ষা করেছে।”
এই কথাটি শুধু একটি বাক্য নয়, এটি এক জাতির ব্যর্থতার দলিল।
যে জাতিকে আল্লাহ তায়ালা “সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত” বলে সম্মানিত করেছেন, সে জাতির একজন নারী আজ বলছেন— “আমার হিজাবই আমাকে বেশি রক্ষা করেছে।”
এই কথার মধ্য দিয়ে তিনি যেন গোটা মুসলিম বিশ্বের অসাড়তা, নিষ্ক্রিয়তা, এবং কাপুরুষতাকে প্রকাশ করে দিলেন।
ফিলিস্তিনে যুগের পর যুগ ধরে চলা গণহত্যা, নির্যাতন আর পাশবিকতা কি আমাদের কিছুই নাড়া দেয় না?
একটি মায়ের বুক খালি হয়ে যায়, একটি শিশুর চোখ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়, একটি শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়—আর আমরা কেবলই উদ্বেগ প্রকাশ করি, কেবলই নিন্দা জানাই, ফেসবুকে কিছু ছবি শেয়ার করি, কিছু পোস্টে রিয়েক্ট দিই—এর বেশি কিছু নয়।
আমরা কতটা বেহায়া হয়ে গেছি?
আমাদের ভাইয়ের রক্তে মাটি ভিজছে, অথচ আমাদের অন্তর শুকনো মরুভূমির মতো।
আমাদের সময় চলে যায় নিস্তব্ধতায়, অনলাইন বিনোদনে, আর “আমার তো কিছুই করার নেই” এই নিষ্ক্রিয় আত্মপক্ষ সমর্থনে।
আমরা কি জানি না, এ নিরবতা-ই আমাদের অপরাধী করে তুলছে?
ইতিহাস কি আমাদের ক্ষমা করবে?
না।
ইতিহাস বলবে—“তারা কাপুরুষ ছিল, তারা নীরব ছিল, তারা নির্যাতিতের কান্নায় সাড়া দেয়নি।”
আমরা কি এই লজ্জা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই?
একজন মুসলমান শুধু নামাজ আদায় করে, রোযা রাখে, আর হজ করে—এইটুকু নয়।
একজন মুসলমানের আত্মা ব্যথিত হয় মুসলিম উম্মাহর যন্ত্রনায়, তাঁর অন্তর কেঁদে উঠে নির্যাতিতের কান্নায়, এবং তাঁর হাত কাঁপে না জালিমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে।
হে প্রভু! আমাদের অন্তরকে জীবিত করো।
আমাদেরকে সাহস দাও, ঈমান দাও, ইখলাস দাও।
আমরা কাপুরুষ হিসেবে ইতিহাসের পাতায় থাকতে চাই না।
আমরা চাই, তোমার রাস্তায় জীবন দিয়ে শহীদদের কাফেলায় শামিল হতে।
আমরা চাই, হিজাবের চেয়ে মুসলমানরা হোক অধিক রক্ষাকারী, অধিক নিরাপত্তার আশ্রয়স্থল।