সোহাগ তালতলী উপজেলা প্রতিনিধি।
বরগুনার তালতলীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য মিলনস্থ সমুদ্র, নদী ও বনের সংযোগস্থলে অবস্থিত আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র ডিসি পয়েন্ট। এখানে যেতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। পর্যটনের আনন্দ শুরু হওয়ার আগেই শুরু হয় দুর্ভোগের যাত্রা। দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা ও খানাখন্দে ভরা সড়কপথে চলাচল করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন তারা
সাগর, নদী ও বনের মিলনস্থল এই ডিসি পয়েন্ট দেখতে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন হাজার হাজার পর্যটক। কিন্তু পর্যটনকেন্দ্রে পৌঁছাতে প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাড়ি দিতে হচ্ছে, যেখানে নেই কোনো পাকা সড়ক, নেই পর্যাপ্ত সড়ক সংস্কারও। তালতলী সদর থেকে নিদ্রা বাজার পর্যন্ত যাওয়া গেলেও, এরপর ডিসি পয়েন্টে পৌঁছাতে প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হয় পর্যটকদের। এই অংশটুকু এখনো কাঁচা এবং কাঁদা-পানিতে ভরা। যদি এই রাস্তা ডিসি পয়েন্ট পর্যন্ত পাকাকরণ করা হয়, তাহলে পর্যটকদের দুর্ভোগ অনেকটাই লাঘব হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। এদিকে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যটকদের এই দুর্ভোগ সরাসরি পর্যটননির্ভর অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। তাই এমন বাস্তবতায়, দ্রুত সড়ক উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগী পর্যটকরা। অন্যথায় সম্ভাবনাময় এই পর্যটন স্পট তার আবেদন হারাতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের
পর্যটকরা বলছেন, “দেশের এমন সুন্দর একটি জায়গা দেখার জন্য অনেক দূর থেকে এসেছি। কিন্তু সড়কের বেহাল দশা দেখে হতাশ হতে হচ্ছে। যদি ভালো রাস্তা থাকত, তাহলে আরও বেশি মানুষ এখানে ঘুরতে আসত। আশা করি সরকার দ্রুত রাস্তা নির্মাণে ব্যবস্থা নেবে।”
বরিশাল থেকে আগত পর্যটক সুমন বিশ্বাস বলেন, “নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখতে এসেছি, কিন্তু ডিসি পয়েন্টে যাওয়ার রাস্তা এমন খারাপ যে পুরো আনন্দটাই মাটি হয়ে গেছে।”
ঢাকার পর্যটক মিজানুর রহমান বলেন, “ভিডিওতে নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে এসেছি, কিন্তু ডিসি পয়েন্টে যাওয়ার রাস্তা এমন খারাপ যে পুরো আনন্দটাই মাটি হয়ে গেছে। গাড়ি নিয়ে যেতে পারিনি। দূরের একটি স্থানে রেখে যেতে হয়েছে।”
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা মো. রাকিব হোসেন বলেন, “ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসেছিলাম প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখাতে। কিন্তু রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সন্তানদের নিয়ে কাঁদামাটি মাড়িয়ে হাঁটা অনেক কষ্টকর।”
ফরিদপুর থেকে আসা শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার
জানালেন জায়গাটা স্বর্গের মতো, কিন্তু রাস্তাটা নরক! এত কষ্ট করে এসে সুন্দর জায়গা দেখে ভালো লাগল, তবে রাস্তা যদি পাকা হতো তাহলে বারবার আসতাম।”
চট্টগ্রাম থেকে আগত পর্যটক আবুল কালাম বলেন, “ভেবেছিলাম গাড়ি নিয়ে চলে যাব ডিসি পয়েন্টে, কিন্তু শেষমেশ পায়ে হেঁটে যেতে হলো। রাস্তার যে অবস্থা, তাতে অনেকেই ফিরেও যেতে পারেন।”
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবার বর্ষা মৌসুমে কাঁচা রাস্তাগুলো কাদা আর জলাবদ্ধতায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে বাইক, অটোরিকশা বা ছোট গাড়ি নিয়েও ডিসি পয়েন্ট পর্যন্ত যাওয়া রীতিমতো দুঃসাধ্য। স্থানীয়রা আরও জানান, নিদ্রা বাজার থেকে ডিসি পয়েন্টে যেতে দুটি বিকল্প সড়ক থাকলেও, উভয়টিই কাঁচা এবং প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ। এই দুই পথেই বর্ষাকালে হাঁটা দুরূহ হয়ে পড়ে। দ্রুত সড়ক উন্নয়ন হলে এই সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে বলে দাবি তাদের ।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা বলেন, “এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যেহেতু পর্যটক বাড়ছে এবং ভারী বর্ষণে কাঁচা রাস্তায় অবস্থা খারাপ থাকায় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি এবং বরাদ্দ চেয়েছি। দ্রুতই বাস্তবায়ন হবে।”