ইমরান বিন সুলতান (স্টাফ রিপোর্টার): ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া নুরুল উলুম কওমি মাদরাসায় আজ (মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫) সকাল ১০টায় খতমে বুখারী শরিফ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে শেষ দরস প্রদান করেন দেশের বিশিষ্ট আলেম, জামিয়া ফয়জুল রহমান বড় মসজিদ, ময়মনসিংহ-এর মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস আল্লামা আব্দুল হক (হাফিজাহুল্লাহ)। তার জ্ঞানগর্ভ আলোচনা ও হাদিসের ব্যাখ্যায় পুরো মাদরাসা প্রাঙ্গণ এক আধ্যাত্মিক আবহে মোড়ানো হয়ে যায়।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন,
মাওলানা আনোয়ার মাহমুদ সাহেব,
মাওলানা সালমানী সাহেব,
গফরগাঁওয়ের বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসার ওলামায়ে কেরাম।
আল্লামা আব্দুল হক (হাফিজাহুল্লাহ)-এর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য
শেষ দরসে আলোচনা করতে গিয়ে শাইখুল হাদিস আল্লামা আব্দুল হক (হাফিজাহুল্লাহ) বলেন,
“হাদিসের এই বিদায় মুহূর্ত আনন্দের, আবার হৃদয়স্পর্শীও। দীর্ঘ এক বছরের সাধনার পর আজ তোমরা ফারেগ হলে। কিন্তু জ্ঞানার্জনের পথ এখানেই শেষ নয়, বরং এটি নতুন এক অভিযাত্রার শুরু। সত্য ও হকের প্রচারই তোমাদের জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।”
তিনি আরও বলেন,
“কওমি মাদরাসাগুলোই হচ্ছে দ্বীনি ইলমের প্রাণকেন্দ্র। এখান থেকেই বেরিয়ে আসেন দ্বীনের খাদেম, ইসলামি জ্ঞানের আলোকবর্তিকা। তোমাদের দায়িত্ব—এই নূরের শপথ রক্ষা করা এবং পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইসলামের সুমহান বার্তা পৌঁছে দেওয়া।”
এ বছর ১১ জন ছাত্র দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেছেন
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে জামিয়া নুরুল উলুম কওমি মাদরাসা থেকে ১১ জন ছাত্র দাওরায়ে হাদিস শেষ করেছেন। তারা হলেন—
১. মাওলানা নাইমুল হক নাঈম
2. মাওলানা মাহফুজ বিন শাহজাহান
3. মাওলানা শামীম আহমেদ
4. মাওলানা জহিরুল ইসলাম
5. মাওলানা শহিদুল ইসলাম (রানীপুর)
6. মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন
7. মাওলানা সালমান আহমেদ
8. মাওলানা শিব্বির আহমেদ
9. মাওলানা মোস্তাকিম বিল্লাহ
10. মাওলানা আব্দুল্লাহ আল আকাশ
11. মাওলানা এনামুল হক
প্রিন্সিপাল হাফেজ নুরুল ইসলাম সাহেবের বক্তব্য
অনুষ্ঠানে মাদরাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ নুরুল ইসলাম সাহেব বলেন,
“জামিয়া নুরুল উলুম শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি দ্বীনি আন্দোলন। আমাদের শিক্ষার্থীরা কেবল ইলম অর্জন করেই থেমে থাকবে না, বরং ইসলামের সুমহান বার্তা সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছে দেবে। তারা হবে সত্যের সৈনিক, যাদের হাতে দ্বীন ইসলাম আরও মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে।”
অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ও বিদায়ের আবেগঘন মুহূর্ত
অনুষ্ঠান শেষে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালিত হয়। মাদরাসার আঙিনায় তখন এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ফারেগ হওয়া শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে দায়িত্বশীলতার অনুভূতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ওস্তাদদের চোখেমুখে ছিল ভালোবাসা, দোয়া ও প্রত্যাশার ছাপ।
জামিয়া নুরুল উলুম কওমি মাদরাসার এই খতমে বুখারী মাহফিল শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি এক নতুন অভিযাত্রার সূচনা। দ্বীনের এই খেদমতগাররা সমাজের পথে-প্রান্তরে ছড়িয়ে দিক ইসলামের সুমহান আদর্শ—এই প্রত্যাশায় শেষ হয় পবিত্র এই আয়োজন।