মুহাম্মদ হাবিব (চরফ্যাশন উপজেলা প্রতিনিধি): আজ মধ্যরাত থেকে মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকারে ২ মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীসহ ইলিশের পাঁচটি অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরার উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।এ সময় নদীতে কোনো জাল ফেলতে পারবেন না জেলেরা।দুই মাসের এই নিষেধাজ্ঞা সফল করতে সচেতনতামূলক প্রচারণার পাশাপাশি অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে মৎস্য বিভাগ।নিষেধাজ্ঞাকালীন দেশের অন্যান্য অভয়াশ্রমের সঙ্গে ভোলার ইলিশা থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনার ৯০ কিলোমিটার ও চর ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।জাটকা সংরক্ষণ অভিযান উপলক্ষে বুধবার বিকেলের মধ্যেই ভোলার ঘাটে ঘাটে ভিড় করে নদী ও সমুদ্র উপকূল থেকে ফেরা ফিশিং ট্রলার। জানা গেছে,মার্চ-এপ্রিলে সাগরে জেলেদের জালে তেমন ইলিশ মেলে না।এ ছাড়া মেঘনা-তেঁতুলিয়ার অভয়াশ্রম দিয়েই ভোলার জেলেদের ট্রলারগুলো সাগরে আসা-যাওয়া করে।জাটকা সংরক্ষণ অভিযানের সময় এসব ট্রলার অভয়াশ্রম ঘোষিত নদী এলাকা দিয়ে সাগরে আসা-যাওয়া করতে পারে না।ফলে ১ মার্চ থেকে নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই সাগর থেকে জেলেদের ট্রলার নিজ নিজ নদীবন্দরে ফিরে আসে।জাটকা সংরক্ষণে ভোলায় ২০০৩-০৪ সাল থেকে অক্টোবর মাসে ‘মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম’ও মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ‘জাটকা নিধন রক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে সরকার।ইলিশের বেড়ে ওঠার পাশা-পাশি অন্যান্য মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে।নিষেধাজ্ঞার এই সময় জেলেরা যাতে নদীতে মাছ শিকারে না নামে তার জন্য মৎস্য বিভাগ ভোলা জেলার ১শত ৩২ টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় চালিয়ে যাচ্ছে বিশেষ প্রচার-প্রচারণা।পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ মধ্য রাত থেকে ৩০ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত নিষিদ্ধ এলাকায় জাল ফেলা, মাছ পরিবহন ও বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়।এ সময়টাতে অভয়াশ্রম গুলোয় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা দন্ডনীয় অপরাধ এবং আইন অমান্যকারীদের ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের সশ্রম কারাদ- অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ভোলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।নিষেধাজ্ঞার এই দুই মাস মাছ শিকার বন্ধে জেলা মৎস্য বিভাগ থেকে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ।গঠন করা হয়েছে মনিটরিং টাস্কফোর্স,করা হয়েছে মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ প্রত্যেক উপজেলার নদীর পাড়ে অভয়াশ্রম এলাকায় মতবিনিময় সভা।এ নিষেধাজ্ঞায় ভোলা জেলার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩শ’ ৭৫ জন নিবন্ধিত জেলের ৮৯ হাজার ৬শ’ পরিবারের জন্য ৭ হাজার ১শ’ ৬৮ মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।বুড়িরদোন ঘাটের জেলে সোহাগ মাঝি বলেন, আমাদের অনেক দেনা আছে।বিভিন্ন ধরনের এনজিও থেকে আমাদের লোন কইরা জালসাবার করছি। সেখানে আমাদের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হয়।দুই মাসের এই অভিযানে যদি সরকার এনজিওর লোনের কিস্তি বন্ধ না করে তাহলে আমরা কিভাবে মাছ ধরা বন্ধ রাখবো।পেডের টানে এনজিওর অফিসারেগো চাপে ঠেইকা নদীত যাইতে হইবো।জেলেকার্ড আছে অথচ আজ পর্যন্ত কিছুই পেলাম না।ঘাটের অন্য জেলে বলেন, প্রত্যেকবারই দুই মাসের অভিযান আমরা মানি কিন্তু বড়মিয়াগো জেলেরা তো মানে না। পুলিশরা তো হেগোরে কিছু কইতে পারে না, কইবো কেমনে টাকা দিয়া সব বন্ধ কইরা দেয় আর মরি আমরা। সরকারের কাছে আমাগো দাবি, আমাগো জাইল্লাগো লইগা অভিযানের সময় যে চাউল দেয়ার কথা সেটা যেন আমরা সঠিক সময়ে ঠিকঠাক ভাবে পাই। আর আমাগো এনজিওর লোনের কিস্তিগুলান এই দুই মাস বন্ধ রাখে।এদিকে নিষিদ্ধ সময় বিগত বছরে সরকারিভাবে দেয়া জেলেদের মাঝে চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।এসব অভিযোগের সত্যতা পেলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সাধারণ জেলেদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করে।সরকারি ভাবে বরাদ্দ জেলেদের চাল পাওয়া নিয়ে দুর্নীতির শঙ্কায় থাকেন সাধারণ জেলেরা।একদিকে পবিত্র মাহে রমজান অপরদিকে বেকারত্বের এই ২ মাস পরিবার নিয়ে কীভাবে দিন কাটবে তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ সবার কপালে।বেতুয়ার জেলে আব্দুস সাত্তার চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রকৃত জেলেরা সুবিধা পায় না।আপনারা লিখে যাচ্ছেন, অনিয়ম তো আর বন্ধ হয় না।প্রশাসন চুপ থাকে, তাতে লাভ হচ্ছে কী?জেলেদের চেয়ে স্থানীয় নেতাদের লোকেরা চাল বেশি নিয়ে যায়।প্রকৃত জেলেরা পায় না। প্রতি বছরের মতো এবারও যেন অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে না হয় সেই আকুতি জেলে পরিবারগুলোর।প্রকৃত তালিকা থাকলেই জেলে পুনর্বাসন প্রকল্প সফল করা সম্ভব হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন,চাল বিতরণ নিয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।জেলেরা যেন সঠিকভাবে চাল পায় সে জন্য মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।একই সঙ্গে জেলেদের তালিকায় স্বচ্ছতা আনার কাজও চলমান রয়েছে।তিনি আরও বলেন,নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে অভয়াশ্রমগুলোতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা দন্ড-নীয় অপরাধ।