মোঃ মাহবুবুর রহমান সোহেল(স্টাফ রিপোর্টার)
জীবন-জীবিকার তাগিদে কিশোরগঞ্জ থেকে ১৭বছর আগে শূণ্য হাতেই গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরের জিরানি বাজার এলাকায় আসেন ওসমান গনি নামের এক ব্যক্তি।প্রথমে দিনমজুরের কাজ,পরে শুরু করেন বাসা বাড়ির উচ্ছিষ্ট ময়লা আবর্জলার পরিষ্কারের কাজ।পাশাপাশি শুরু করেন ভাঙ্গারীর ব্যবসা আর হঠাৎ করেই সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে আতাঁত করে সড়কের জায়গা জবরদখল করে গড়ে তোলেন ময়লার বিশাল ভাগাড় ও ট্রাকস্ট্যান্ড।এদিকে মহাসড়কের জায়গা ভাড়া দিয়ে মাসে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এছাড়াও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে ময়লার ব্যবসা ও ট্রাকস্ট্যান্ড টিকিয়ে রাখতে গড়ে তুলেছেন সন্ত্রাস বাহিনী। সাথে নিয়েছেন নিজের ২ ছেলেকেও।এমনকি কিনেছেন ৪৩ লক্ষ টাকা দামের লেটেস্ট মডেলের প্রিমিও প্রাইভেটকার।শুধু তাই নয়,তার তিনটি সন্তানসহ এলাকার বাড়ি ভাংচুর,জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে নাম জড়িয়ে অদৃশ্য ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে জিরানি এলাকার ত্রাস হয়ে উঠেছেন ওসমান গনি নামের এই ব্যক্তি।এছাড়াও মানিকগঞ্জ সওজের নয়ারহাট শাখার এসও শহীদ এবং সুপারভাইজার জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে রয়েছে ওসমানকে সহযোগীতা করার অভিযোগ।এমনকি চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের নবী-টেক্সটাইল ও চক্রবর্তী এলাকার মাঝামাঝি স্থানের পশ্চিম পাশে সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রায় তিন একর জমি দখল করে ময়লার ভাগার গড়ে তুলেছেন ওসমান গনি।
এছাড়াও পাওয়ার ট্রিলার ও ট্রাকসহ প্রায় শতাধিক গাড়িতে করে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন এখানে ময়লা ফেলা হয়। ময়লা ফেলানোর বিষয়ে গাড়ি চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,ছোট গাড়ি থেকে মাসিক ৫ হাজার আর বড় গাড়ি থেকে ১০/১৫ হাজার টাকা ওসমানকে দিতে হয়। এতে প্রতি মাসে ময়লার ভাগার থেকেই আসে প্রায় ১০/১৫ লক্ষ টাকা।আর ময়লার দূর্গন্ধ আশেপাশের প্রায় আধা কিমি এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে।দূর্গন্ধের তীব্রতায় নাক চেপে যাতায়াত করতে দেখা যায় পথচারীদের।ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে এলাকার বসবাসরত ভাড়াটিয়ারাও এলাকা ছেড়ে চলে যান।
এবিষয়ে মরিয়ম আক্তার নামের এক পোশাক শ্রমিক বলেন,নবী টেক্সটাইল এলাকায় বাসা ভাড়া থেকে চক্রবর্তী একটা কারখানায় চাকরি করি।প্রতিদিন এই পথে যেতে হয়।ময়লার দুর্গন্ধে এই রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া খুবই কষ্ট হয়।তাই সামনের মাসে এই এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলে যাবো।
এছাড়াও নবী-টেক্সটাইল এলাকায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পূর্ব পাশে সড়ক ও জনপদের উদ্ধার করা জমি দখলে নিয়ে ট্রাকস্ট্যান্ড করেছে এই বাহিনী।এই স্ট্যান্ডে মাসিক ৩ হাজার ৫০০ টাকা চুক্তিতে ৭২টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রাখা হয় বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।এছাড়া ১৫০ টাকা দৈনিক চুক্তিতেও বেশ কিছু গাড়ি রাখা হয়।আর ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে মাসে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা আসে ওসমানের কাছে।
ট্রাকস্ট্যান্ডে লাইনম্যানের দায়িত্বে থাকা সবুজ মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি জানান,আমাদের এখানে মাসিক ৩৫ শত টাকা চুক্তিতে ৭২টি গাড়ি রাখা হয়। আর ১৫-২০টি গাড়ি আছ তাদের কাছ থেকে দৈনিক ১৫০ টাকা করে নিই। এই জমির মালিক ওসমান ভাই,আমি লাইনম্যানের দায়িত্বে আছি।সমস্ত টাকা পয়সা আমি তুলি।
কিশোরগঞ্জ বাড়ী হওয়ার সুবাদে পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে বীরদর্পে চলে সে।আর নবী-টেক্সটাইল এলাকার মৃত মুন্নাফের ছেলে দেলোয়ারের ছত্রছায়ায় এবং সড়ক ও জনপদ এর কতিপয় কয়েক অসাধু কর্মকর্তার পৃষ্ঠপোষকতায় দিনদিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ময়লা ব্যবসায়ী ওসমান গনি।
ওসমান গনি বলেন,আমার ব্যাপারে ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে দেখেন আমি কেমন মানুষ। ট্রাকস্ট্যান্ডে দিনে গাড়ি রাখিনা,রাতে কিছু গাড়ি রাখি।ওখান থেকে পোলাপানের কিছু খরচ আসে।টিনসেট ঘরে আমার কয়জন লোক থাকে শহীদ স্যারদের কিছু লোক থাকে।আর ময়লার এখানে অনেক খরচ,দুটা ভেকু আছে।লোকজন আছে। তাদের হাজিরা দিতে হয়।সওজের লোকেরা আসে তেমন কিছু বলেনা।
মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নয়ারহাট শাখার সেকশন অফিসার(এসও)শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন,ওসমানকে আমি মৌখিক ভাবে ট্রাকস্ট্যান্ড করতে বলেছি।ট্রাকস্ট্যান্ড তো রাস্তার পাশে অনেকই আছে।টিনসেট ঘরে আমাদের কিছু লোক থাকে,ওসমানের লোকও থাকে। ময়লার ভাগাড় নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন সাথে একটু জটিলতা আছে ফলে উচ্ছেদ করতে পারছিনা।
(মোঃ মাহবুবুর রহমান সোহেল)
স্টাফ রিপোর্টার(গাজীপুর)
মোবাইল:০১৮২৯-৯৮২১৯৭
তারিখ:০৩.০৩.২০২৫