সংবাদদাতা, গফরগাঁও (ময়মনসিংহ)
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে উত্তরা ৬ ও ৭ নম্বর সেক্টরে রাজপথে সামনে থেকে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন গফরগাঁও উপজেলার উস্থি ইউনিয়নের কান্দিপাড়ার সাহসী তরুণ নিশাদ মাহমুদ মুন্না। টঙ্গী সরকারি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের এই শিক্ষার্থী ছিলেন প্রতিটি কর্মসূচিতে দৃশ্যমান ও সক্রিয়।
রাজপথে সরাসরি অংশ নিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি—১৬টি গুলি শরীরে নিয়েও থামেননি। একের পর এক কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন, সহযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। অথচ এই গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবরটি তার পরিবার জানতে পারে, ৫ আগস্টের পরে।
নিশাদ বলেন, “আমি জীবন-মৃত্যুর ভয় নিয়ে রাজপথে নামিনি। দেশের জন্য, মানুষের জন্য প্রতিবাদ করাটাই আমার দায়িত্ব মনে হয়েছে। আমি কারো ছায়ায় সুবিধা নিতে চাইনি, বরং ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছি।”
আন্দোলনের পরে অনেকেই তাকে স্বাস্থ্য কার্ড করিয়ে নিতে বলেন, যাতে ভবিষ্যতে সরকারিভাবে চিকিৎসা বা সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু নিশাদ রাজি হননি। তার ভাষায়, “আমি যদি দেশের জন্য কিছু করি, তা নিজের স্বার্থে নয়। সেটা যদি ব্যথা বয়ে আনে, সেটাও মেনে নেব।”
আজ যখন অনেকেই আন্দোলনের ‘ক্রেডিট’ নেওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি করছেন—কে কোথায় ছিল, কতটা সামনে ছিল—সে জায়গায় নিশাদ যেন একেবারেই ব্যতিক্রম। সুযোগ-সুবিধা নয়, স্বার্থ নয়, দেশের জন্য দায়বদ্ধতা থেকেই তার আত্মত্যাগ।
তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট নিশাদ আরও বলেন, “আমার মতো অনেকেই আছে, যারা নিরবে আসে, দেশের জন্য লড়ে যায়, আবার নিরবেই চলে যায়। আমরা দলের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করি না, বা ব্যানার-টিশার্ট গায়ে চাপিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই না।”
নিশাদের এই আত্মত্যাগ ও নীরব কর্মযজ্ঞ আজও মনে রেখেছে তার সহযোদ্ধারা। অনেকের মুখে আজও একই প্রশ্ন—জুলাইয়ের সেই সাহসী লড়াইয়ের আসল ক্রেডিটটা কার? হয়তো ইতিহাস একদিন সে উত্তর নিজেই দেবে।