কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার জলেয়ারমার ঘাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ল্যাব না থাকা সত্ত্বেও ল্যাব অপারেটর পদে নিয়োগ প্রদান এবং তাকে দিয়ে নিয়মিত ক্লাস করানোসহ সরকারি তহবিল থেকে অবৈধভাবে বেতন ভাতা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন এবং শিক্ষা বোর্ডের নজরে আসলেও এখন পর্যন্ত বেতন ভাতা বন্ধ হয়নি, যা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (৬ষ্ঠ–৮ম শ্রেণি) বিজ্ঞান ল্যাব না থাকলে ল্যাব অপারেটর পদ অনুমোদিত নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা নীতিমালা ২০১০ (সংশোধিত ২০২৩) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী এ ধরনের পদ কেবল পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞান ল্যাব থাকা বিদ্যালয়ে অনুমোদন যোগ্য।
অভিযোগে জানা গেছে, অত্র বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং বিদ্যালয়ে কোনো বিজ্ঞান ল্যাব নেই। তবুও তাকে নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং বিদ্যালয়ের রুটিনে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে বিষয় বণ্টন করে ক্লাস করানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার কর্তৃক সরকারি তদন্তে পদটি অবৈধ প্রমাণিত হয়। তদন্তে স্পষ্টভাবে বলা হয়,
“বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ল্যাব না থাকা সত্ত্বেও ল্যাব অপারেটর পদ অনুমোদিত নয় এবং এ পদের বেতন ভাতা গ্রহণ সরকারি তহবিলের অপব্যবহার।”
কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরও বিদ্যালয়ের সভাপতি, যিনি স্থানীয় উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা, এবং প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ কাইচার লিটন বেতন ভাতা বন্ধের কোনো ব্যবস্থা নেননি। ফলে সরকারি অর্থ ব্যয়ের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
আইনের ভিত্তি
১. সরকারি অর্থের অপব্যবহার:
দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ধারা ৪০৯ অনুযায়ী সরকারি অর্থ আত্মসাৎ একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ধারা ১৯(১) অনুসারে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ বা অবৈধভাবে ব্যবহার দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত।
২. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা লঙ্ঘন:
নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ল্যাব না থাকলে ল্যাব অপারেটর পদের অনুমোদন নেই।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সর্বশেষ নির্দেশনায় উল্লেখ আছে, “বিজ্ঞান ল্যাব না থাকা কোনো বিদ্যালয়ে ল্যাব অপারেটর নিয়োগ প্রদান করা যাবে না এবং এরূপ পদে এমপিও অনুমোদন দেওয়া যাবে না।”
৩. প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার:
দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ধারা ৪২০ অনুসারে প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি অর্থ গ্রহণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা জেলা প্রশাসকের রয়েছে।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছে, সরকারি তহবিল রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এর মাধ্যমে অন্য বিদ্যালয়গুলোতেও অনিয়ম ও দুর্নীতির দৃষ্টান্ত তৈরি হবে।
সরকারি তহবিলের স্বচ্ছতা এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের মান উন্নয়নের স্বার্থে অবিলম্বে এ অবৈধ নিয়োগ ও বেতন ভাতা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এলাকার সচেতন অভিভাবক ও শিক্ষার্থী সমাজ। তারা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, অবৈধ নিয়োগের সঙ্গে জড়িত সকলকে বিচারের আওতায় এনে উদাহরণ সৃষ্টি করতে।