নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
মোঃ মিলন হক। কথাসাহিত্যিক
মোঃ বেলাল হোসেন একজন বনেদি এবং সম্ভ্রান্ত লোক। তিনি নিঃস্ব সন্তান।তার স্ত্রী মোছাঃ সাবিনা ইয়াসমিন। তার স্ত্রীর প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ায় চলাফেরা করতে পারে না। রুমের মধ্যে থেকে দিনরাত্রি অতিবাহিত করে।
বেলাল হোসেন তার বিস্তর সম্পত্তি জায়গা জমিন দেখার জন্য অনেক কাজের লোক নিয়োগ দিয়েছে। কাজের লোকেরা তার বিশাল গৃহস্থালি এবং কৃষি কাজ করে।
বেলাল হোসেনের দাদা শিমুল তলার বিল হিন্দু দহরাম চক্রবর্তীর কাছ থেকে কিনে নেয়। বেলাল হোসেনের দাদা তৎকালীন যৎসামান্য জমিদার ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর। বেলাল হোসেনের বাবা যখন থেকে সংসারের দায়িত্ব নিয়েছে তখন থেকে শিমুল তলীর হিন্দু কৃষকরা দাবি করছে ।বেলাল হোসেনের দাদা রহমান চৌধুরী।জোর পূর্বক দখল করেছে বিল।
শিমুল তলার বিল সাড়ে সাত বিঘার মতো জায়গা নিয়ে বিস্তৃত।এই বিল থেকে অজস্র মাছ আহরণ করে বর্ষার মৌসুমে।খরার মৌসুমে বিলের পানি দিয়ে চাষাবাদ করা হয়।মূলত চাষাবাদ ও বিলের মাছের জন্য বিবাদ কৃষকদের সঙ্গে।
বেলাল হোসেন তার কাজের লোক রহমত আলী কে বিভিন্ন বিষয়ে প্রহার করে। রহমত আলী নির্বিঘ্নে সব কিছু সহ্য করে। রহমত আলীর বাবা মা কেউ নেই।ছোট কাল থেকে বেলাল হোসেনের বাড়িতে বড় হওয়া।
বেলাল হোসেনের বাড়ির কাজের মেয়ে মরিয়ম।
মরিয়মের স্বামী মারা গেছে।একটি ছয় বছরের ছেলে আছে। ছেলের নাম দুলাল। মরিয়মের শ্বশুর অসুস্থ শরীর নিয়ে বেঁচে আছে। কাজকর্ম করতে পারে না দীর্ঘ দিন যাবৎ।
শাশুড়ি পুত্র মৃত্যু শোকে পাগল হয়ে মারা যায়।
মরিয়মের স্বামী জীবিত থাকার সময় তিনি আয় রোজগার করে সংসার
চালাতেন।
মরিয়ম বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে বেলাল হোসেনর বাড়িতে কাজ করতে যায়। অসুস্থ শ্বশুর কে বাড়িতে রেখে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারে না। মরিয়ম সকালে কাজে গেলে দুলাল তার দাদার দেখাশোনা করে। সন্ধ্যায় মরিয়ম বাড়িতে আসে।
রহমত আলী অবিবাহিত।তার মরিয়ম কে খুব ভালো লাগে। মরিয়ম দুপুরে যখন থালা বাসন পরিষ্কার করতে পুকুরে যায়। রহমত আলী মাঝেমধ্যে পুকুর পাড়ে মরিয়মের সঙ্গে লুকিয়ে দেখা করতে যায়। মরিয়মের ও রহমত আলীকে ভালো লাগে। রহমত আলী বোকা মানুষ, খুব সহজ সরল এর জন্য মরিয়ম তাকে পছন্দ
করে।
একদিন দুপুরে রহমত আলী পুকুর পাড়ে মরিয়ম কে বলে,আমি তোমাকে বিয়ে করতে চায়। মরিয়ম বলে, আমাকে খাওয়াবি কি? নিজে তো অন্যের খাস হোটেলে। কোন কাজ ও করতে পারিস না। আহারে পুরুষ মানুষের আল্লাদ! রহমত আলী বলে,দেখ তুই কিন্তু আমাকে অপমান করতেছিস। আমি তোকে বিয়ে করে খাওয়াতে পারি যেন সেই ব্যবস্থায় করতেছি।
মরিয়ম বলে,যে দিন ব্যবস্থা করতে পারবি সে দিন বিয়ের কথা বলিস। রহমত আলী বলে, আইচ্ছা ঠিক আছে।
দুলালের দাদার যেদিন একটু ভালো লাগে সেদিন দুলাল ও তার মায়ের সাথে, সকালে বেলাল হোসেনর বাড়িতে সাবিনা ইয়াসমিন কে দেখতে এবং চকলেট খেতে আসে। সাবিনা ইয়াসমিন নিজের নাতির মতো দুলাল কে ভালোবাসে। দুলাল চকলেট পেলে খুব খুশি হয়।
এবং তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যায়।তার দাদা যখন ঘুমায় বেলাল পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে খেলতে যায়।
একদিন দুপুরে রহমত আলী ও মরিয়ম পুকুর পাড়ে কথা বলার সময় বেলাল হোসেন দেখে। বেলাল হোসেন রহমত আলী কে কাছে ডাকে , রহমত আলী কাছে আসলে ,বেলাল হোসেন তার হাতের লাঠি দিয়ে প্রহার করে।পা দিয়ে লাথি দেয়। মরিয়ম বেলাল হোসেনের পা ধরে অনুনয় করে বলে, রহমত আলী ভাই আমার সাথে এমনিতেই কথা বলতে গেছে মালিক উনাকে মারবেন না। এরপর বেলাল হোসেন রহমত আলী কে লাথি মারা ছেড়ে দেয়।
কিছু দিন পর বেলাল হোসেন শিমুলতলার বিলের মামলার রায় পায়। তার পক্ষে এবং সবাইকে মিষ্টি মুখ করায়। বেলাল হোসেন রহমত আলী কে বলে এখন থেকে তোমাকে আমার ঘরে থাকতে হবে না। রহমত আলী বলে, হুজুর যামু কই ? বাপের তো ভিটা মাটি নাই।বেলাল হোসেন বলে, শিমুলতলার বিলে থাকবি। রহমত আলী বলে, হুজুর আমার জন্য একটা কাম করেন তাহলে মরিয়মের সঙ্গে আমারে বিয়ে দেন ওখানে তো পরিচিত কেউ নেই।একাই থাকতে ভালো লাগবে না।
বেলাল হোসেন বলে, তোমাকে বিয়ে করতে হবে না। রহমত আলী বলে,কন কী? সারাজীবন আমি এমনিতেই আয় বুড়ো হয়ে থাকবো। বেলাল হোসেন বলে,না।দেরিতে বিয়ে করবি। রহমত আলী বলে,আর দেরি করার কি আছে? আপনে বিয়ে দিবেন কি না কন?
এর কিছুদিন পর বেলাল হোসেন মরিয়মের দিকে লোভনীয় দৃষ্টি দেয়। বিভিন্ন কাজের ছলে কাছে ডাকে। মরিয়ম সকালে ঘর পানি দিয়ে পরিষ্কার করলে, বেলাল হোসেন অকারণে ঘরে যায়। বিভিন্ন ইয়ার্কি করে মাঝেমধ্যে,মরিয়ম প্রতিবাদ করে না। যখন বেলাল হোসেন কোন ধরণের ইয়ার্কি করার চেষ্টা করে মরিয়ম লজ্জা পেয়ে, মাথায় ঘোমটা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে। মরিয়ম রহমত আলী কে বিষয় অবগত করে বলে মালিকের ভাবসাব ভালো লাগে না। রহমত আলী বলে, সাবধানে থাকিও। আইচ্ছা তুমি এ নিয়ে চিন্তা করিও না আমি হুজুরকে বলবো বিষয় টা।তিনি যেন ইয়ার্কি না করে।
একদিন মরিয়ম বেলাল হোসেন কে বিকেলে তার রুমে চা দিতে গেলে, বাড়িতে কাজের অন্যান্য লোক না থাকায়। বেলাল হোসেন মরিয়মের হাত ধরে বিছানায় বসায়। মরিয়ম বলে, মালিক কি করতেছেন হাত ছাড়েন।হাতে ব্যাথা লাগছে।হাত ছাড়েন না হলে, আমি চিৎকার করবো।
বেলাল হোসেন বলে, চিৎকার করলে ছুরি দিয়ে গলা কেটে দিবো । বেলাল হোসেন জোর পূর্বক ধর্ষণ করতে শুরু করে। ধর্ষণের পূর্বে রহমত আলীও বাড়িতে ছিলেন না শিমুল তলার বিলে গিয়েছিল দেখার জন্য। শিমুলতলার বিলে খবর দেওয়ার জন্য রুমে কাছে এলে , রহমত আলী দেখে বেলাল হোসেন মরিয়ম কে ধর্ষণ করতেছে । রহমত আলী কান্নায় ভেঙে পড়ে। মরিয়ম সন্ধ্যার পর রহমত আলীর সঙ্গে দেখা করে। রহমত আলী বাকরুদ্ধ গলায় কিছু বলতে পারে না। আকাশের অবস্থা বেশ ভালো না থাকায় এবং রাত অনেক হওযায় মরিয়ম কে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তার বাড়ির কাছে আসে। মরিয়ম বাড়িতে এসে, দেখে তার ছেলে ঘুমাচ্ছে। এরপর গোসল করে এসে তার শ্বশুরের রুমে যায়।বাবা বলে ডাকলে দেখে বৃদ্ধের সাড়া নেই। তার শ্বশুরের গায়ে হাত দিয়ে দেখে মারা গেছে। মরিয়ম কান্না শুরু করে।তার ছেলে ঘুম থেকে দৌড়ে এসে দেখে তার দাদা মারা গেছে।
রহমত আলী রাতে দেখে বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং লোকজন সবাই ঘুমাচ্ছে এমতাবস্থায় বেলাল হোসেনের রুমে ঢুকে এবং বালিশ চাঁপা দিয়ে মেরে দেয় বেলাল হোসেন কে। এরপর রাতের অন্ধকারে বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ায় যায় মরিয়মের বাড়িতে। মরিয়ম আর তার ছেলে কান্না করতেছে। বাড়ির উঠানে বৃষ্টির মধ্যে মরিয়মের শ্বশুর কে কবর দিয়ে। ভোরের কিছু আগ মুহূর্তে রহমত আলী মরিয়ম ও তার ছেলেকে নিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়।