কষ্টের গভীরতা এবং নিঃশব্দ সন্ধ্যার অশ্রু
লেখক: ইমরান বিন সুলতান
সন্ধ্যাটা আজ অন্যরকম। সারাদিনের কাজের ক্লান্তি নয়, বরং এক অদ্ভুত ভারী অনুভূতি বুকের ভেতর চেপে বসে আছে। জানালার পাশে চুপচাপ বসে থাকা মানুষটা একমনে বাইরে তাকিয়ে আছে। সামনের আকাশটা যেন তার মনেরই প্রতিবিম্ব—কখনো মেঘে ঢাকা, কখনো ঝড়ো বাতাসে অস্থির।
প্রতিদিন ভেবেছে, পৃথিবীটা হয়তো কঠিন, কিন্তু মানুষগুলো তো সুন্দর। তারা ভালোবাসবে, আগলে রাখবে, আর কষ্টগুলো ভাগাভাগি করবে। কিন্তু বাস্তবতার নির্মম আঘাতে সেই বিশ্বাসগুলো ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে। প্রিয় মানুষগুলো, যাদের দিকে তাকিয়ে শক্তি , তারাই যেন আজ সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিচ্ছে।
সন্ধ্যার বাতাসে মিশে থাকা এক অদ্ভুত শূন্যতা ভেতরটাকেও গ্রাস করছে। মনটা বারবার প্রশ্ন করছে, “কেন? কেন বারবার এই কষ্ট আমার জীবনে? কেন প্রিয়জনরাই আমার আনন্দ মুছে দিতে এতটা মরিয়া?”
শুধু একবার ভালোবাসার প্রতিধ্বনি পাওয়ার আশায় দিনের পর দিন অপেক্ষা করেছে। কিন্তু এই প্রতীক্ষার কোনো শেষ নেই। প্রিয়জনদের কাছ থেকে আসা প্রতিটি আঘাত যেন আরও একটু নিঃস্ব করে দিচ্ছে। শব্দগুলো গলার কাছে আটকে থাকছে না। মনের গভীরে জমে থাকা অশ্রুগুলো ঝরে পড়ছে নিঃশব্দে, সন্ধ্যার আকাশের মতোই।
হয়তো এই মুহূর্তটা জীবনের আর দশটা দিনের মতোই হবে। ক্লান্তি, কষ্ট, আর গভীর নীরবতা। কিন্তু আজ যেন সবকিছু একটু বেশি ভারী। মনে হচ্ছে, এই কষ্ট ভেতরটা টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে। পৃথিবীর আলো-আঁধারির মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যেন অসম্ভব হয়ে উঠছে।
জানা আছে, সময় একদিন সব মুছে দেবে। এই কষ্ট, এই আঘাত—সবই ধীরে ধীরে অতীত হয়ে যাবে। কিন্তু আজকের রাতটা মনের গভীরে এক নতুন ক্ষতের দাগ এঁকে দেবে। হয়তো সেই দাগটাই একদিন আরও শক্তিশালী করে তুলবে। হয়তো সেই রাতের অন্ধকার থেকেই আলো খুঁজে পাওয়া যাবে।
কিন্তু আজ? আজ চাওয়া খুবই সামান্য। একটুকরো শান্তি, এক বিন্দু ভালোবাসা। শুধু একটা আশ্বাস, যে আশ্বাস বলবে—”তুমি একা নও।”
সন্ধ্যার বাতাসে ধীরে ধীরে ভেসে যাচ্ছে সেই নীরব কান্না। আকাশটা এবার সত্যিই কালো হয়ে গেছে। আর জানা নেই, এই রাতের শেষ কোথায়। হয়তো সময়ই একদিন সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে।