অবিবাহিতের একজোড়া জুতো
হারুনুর রশিদ
প্রাচীন গ্রীসে একজন দয়ালু রাজা এবেলন । তার প্রিয়তমা স্ত্রী এ্যাখিলিনা। আর তাদের একমাত্র পুত্র সন্তান ক্যালিরিয়ো। রুচিশীল ক্যালিরিয়ো, বাবার ইচ্ছায় প্রথম থেকে যুদ্ধের দেবী এলালার পূজা করত। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্যালিরিয়ো যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা পরিত্যাগ করে বিবাহের দেবতা হাইমেনের পূজা শুরু করে। আর এ পরিবর্তনের প্রধান কারণ ছিল সেনাপতি হেইলির কন্যা ক্যাথরিন। রূপে গুনে ক্যাথরীন যেমন অনন্যা যুদ্ধ বিদ্যায় ও তেমনি পারদর্শী। সেনাপতি হেইলি রাজার অনেক বিশ্বস্ত ছিলেন। হেইলি নিজ গুনে সেনাপতির পদ পেলেও তিনি ছিলেন নিম্ন বর্ণের। রাজা প্রায়দিন হেইলির সাথে রাজ্যভ্রমনে বের হতেন। রাণী পরম যত্নে রাজাকে নিজ হাতে সাজিয়ে দিতেন। নিজ হাতে রাজার স্বর্ণ খচিত জুতোজোড়া মোলায়েম কাপড় দিয়ে মুছে দিতেন। ক্যালেরিয়ো এদৃশ্য অপলক দেখতেন আর দেবতা হাইমেনের নিকট ক্যাথরীনকে পাওয়ার আর্জি জানাতেন। ক্যালিরিয়োর একান্ত ইচ্ছা ছিলো এক দিন ক্যাথরীন ও পরম সোহাগে নিজ হাতে তার স্বর্ণ খচিত জুতোজোড়ার সামান্য ধুলো পরিস্কার করে দেবে রাজা হিসেবে নয় একজন স্বামী হিসেবে। এদিকে হেইলির মধ্যস্থতায় দীর্ঘদিন ধরে চলামান দ্বন্দ্বের সমাপ্তি ঘটলো এবেলন যখন ২০ বছর পর তার বোনের বাড়ি গেলেন। ভাই-বোনের বিবাদ মিটিনো ও সম্পর্কের দৃঢ়তার জন্য এবেলন সুশ্রী ভগ্নি কন্যা ব্যাসিলিয়ার সাথে ক্যালিরিয়োর বিয়ের কথা পাকা করে আসেন। সেনাপতি হেইলি এ সংবাদ শুনে কন্যার নিয়তির দোষ দিয়ে পাশ্ববর্তী রাজপুত্রের সাথে ক্যাথরীনের বিয়ে সম্পন্ন করেন। প্রিয়তমাকে হারানোর শোকে ক্যালিরিয়ো হ্যামলক খেয়ে দেহত্যাগ করেন। তার ইচ্ছ গুলো অপূর্ণ রয়ে গেল। বিবাহের দেবতা হাইমেন ক্যালিরিয়োর ভক্তি ও ত্যাগ দেখে বিশ্ববাসীর সব অবিবাহিতদের বর দেন যে, যতদিন একজন ছেলের বিয়ে না হয় ততদিন সেছেলের জুতোজোড়ায় ময়লা পড়বে না। কোন অবিবাহিতকে কোন দিন জুতো মুছে পরিস্কার করতে হবে না।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।