জন্মের ১৯ বছর পর মায়ের সঙ্গে কথা।
মোঃ মিলন হক
সালমার জন্ম এক বৃত্তবান পরিবারে।তার বাবা একজন বোবা মানুষ।মা বেশ দেখতে সুন্দরী ছিল।তার মা গরীব ঘরের মেয়ে। সালমার বাবার তিন ভাই। সালমার বাবা ছোট। সালমার একজন বড় বোন ৩ বছরের আছে। সালমার জন্মের পূর্ব থেকেই তার বড়মা তার মায়ের সঙ্গে সংসারে কলহল বিবাদ করে।সালমার মা অন্যায় সহ্য না করতে পেয়ে বাধ্য হয়ে তার বাবা কে তালাক দেয়।
সালমাকে তার মা নিয়ে যেতে চেয়েছিল সঙ্গে কিন্তু তার পরিবারের লোকজন নিয়ে যেতে দেয় নি ।সালমা তার দাদির কাছে বড় হতে থাকে। তার দাদি বয়স্কা হাওয়ায় তার ঠিক মতো যত্ন নিতে পারে না। সালমার মাঝেমধ্যে তার মায়ের জন্য মন খারাপ হয়ে ওঠে।সালমা একদিন রাতে বিছানায় শুয়ে তার দাদির কাছে জানতে পারে, তার মা মারা যায় নি। সালমা তখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী।তার মা তাকে ছেড়ে চলে গেছে। তার নানার বাড়ি। তার নানার বাড়ি হরিপুর গ্রামে।
সালমা ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠার পর । প্রতিদিন রাতে একাই ঘুমাতো।রাতে তার মায়ের জন্যে ভীষণ মন খারাপ হতো এবং কান্না করতো।
তার কান্নার দেখার মতো কেউ নেই। তার কান্নার হাহাকার শুনে শুধু অন্তর্যামী। তার চোখের জলে ভিজে যায় বালিশ।
সালমার বড়বোনের বিয়ে হয় সালমা যখন
নবম শ্রেণীতে পরে । একদিন জানতে পারে তার নানার বাড়ির এলাকার একজন মহিলা পাশের গ্রামে আছে।ঐ মহিলার কাছে সমস্ত ঘটনাবলি জানতে পারে তার মায়ের।ঐ মহিলায় ঘটকালি করেছিল তার মায়ের বিয়েতে। তার মা দেখতে কেমন ছিল? সালমা কিছু বলতে পারে না। মহিলা বলে, তোমার মায়ের মতো এতো সহজ,সরল মেয়ে আমি দেখি নি। আমি তোর বাপের সঙ্গে বিয়েটা দিয়েছিলাম তোর মা গরীব ঘরের ছিল বলে। তোর বড়মা আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে। এত্তো সুন্দরী মেয়েটার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছে। তোর বাপ বোবা ছিল তোর মা হিসেব নিকেশ পারতো বেশ ভালো বলেই। তোর দাদির সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল।উনি একদিন আমাকে বলে ভাবী আমার ছেলেটার জন্য একটা মেয়ে দেখেন। আমি তোর মাকে বিয়ে দিয়েছিলাম সব আমার পোড়া কপাল!
সালমা মায়ের জন্য ঐ মহিলার কাছে কান্না করে।ঐ মহিলা বলে, তোমার মায়ের অন্য জায়গায় বিয়ে হয়েছে। এখন ঢাকায় থাকে।
সালমা তার মামা নানাকে চিনে না। তার নানার বাড়িতে যাওয়ার জন্য মন গলাকাটা মুরগির মতো ছটপট করে কিন্তু সেখানেও যেতে পারে না।
কলেজে ওঠার পর সালমার অনেক বন্ধু বান্ধবী হয়। সালমা তার একজন বন্ধুকে ভাই বলে ডাকে।ঐ বন্ধুর নাম তাহের। তাহের তার প্রতিদিন খোঁজ খবর নিতো বোনের মতো যেহেতু সালমা তাকে বলেছে, আমার ভাই নেই। আমি তোকে ভাই বলবো তুই আমার ভাই। তাহের জানে সালমার মা মারা গেছে।
একদিন রাতে সালমা বলে আমার পেট ভীষণ ব্যথা করে। সালমার পেটের ব্যাথা ছোট থেকে ছিল। পেটের ব্যাথায় সালমা কান্না করতেছে।
সালমার কান্নায় তাহের ও কান্না করে। তাহের সালমাকে বলে, “একজন মেয়ের জন্য এই পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ ডাক্টার হচ্ছে মা।“ আন্টি তো নেই।সবার ভাগ্যে মা থাকে না বেশি দিন।
সালমা বলে, আমি জানি আমার মা আছে।
আমার মা ঢাকায় থাকে। কোন দিন কথা হয় নি।
তাহের সালমার মায়ের বিষয়ে সমস্ত ঘটনা শুনে সালমার কাছে। সালমা তাহের কে তার মায়ের বিয়ের ঘটকালি করা মহিলার কথা বলে।
তাহের সালমাকে বলে,ঐ মহিলার সাথে দেখা করে মামার কাছ থেকে আন্টির নাম্বার নিয়ে আসতে বলবে। যদি আন্টির নাম্বার পেয়েও যাও তাহলে কথা বলা যাবে।
একদিন বিকাল বেলা সালমা তার বান্ধবী রেহানা কে নিয়ে ঐ ঘটক মহিলার কাছে যায়। এরপর মহিলার সঙ্গে দেখা করে ।দেখা করার পর ঐ মহিলা কে তার মায়ের নাম্বার নিয়ে আসতে বলে তার মামার কাছ থেকে।
মহিলা পনেরো দিন পর তার বাপের বাড়ি যায় । তারপর সালমার নানার বাড়িতে যায়। সালমার নানার বাড়িতে গিয়ে জানতে পারে, তার নানা একমাস আগে মারা গেছে। সালমার মা ঢাকা থেকে এসেছিল। কিছু দিন হলো আবার ঢাকায় চলে গেছে। মহিলা সালমার মায়ের নাম্বার তার মামার কাছ থেকে নেয়। এরপর সালমাকে নিয়ে এসে দেয় নাম্বার। সালমা রাতে বেলা বাড়িতে যখন ঘুমিয়ে পড়েছে তখন কল দেয়। সালমার যখন ১৯ বছর বয়স। মা ও মেয়ের জীবনের প্রথম কথা হয়।