লেখক: ইমরান বিন সুলতান:: জীবন যখন সম্ভাবনার দিগন্তে পা রাখার সময়, তখনই টাকার অভাবে থমকে যায় অনেক যুবকের পথচলা। তারা শৈশব থেকেই বড় স্বপ্ন দেখে—কারও চোখে চিকিৎসক, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউবা শিল্পী বা বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু বাস্তবতার কঠিন দেয়ালে সেই স্বপ্নগুলো একে একে ভেঙে যায়। টাকার অভাব তাদের মেধা আর উদ্যমকে দাবিয়ে রাখে, যেন কোনো দুর্বার নদীর বুকে অযথা বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
এই যুবকেরা জাতির প্রাণ। তাদের শ্রম আর সৃজনশীলতাই সমাজের অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি। কিন্তু শিক্ষার খরচ, প্রশিক্ষণের অভাব, কিংবা ব্যবসা শুরু করার পুঁজি না থাকায় তাদের মেধা বিকাশের আগেই থেমে যায়। মেধাবী শিক্ষার্থীটি কলেজের ফি দিতে পারে না, চাকরিপ্রত্যাশী যুবকটি আবেদন ফরমের খরচ যোগাতে হিমশিম খায়। এভাবে তাদের প্রতিভা আর স্বপ্ন হারিয়ে যায় সমাজের অবহেলার ধুলোয়।
অবহেলা শুধু তাদের জীবন নয়, গোটা সমাজেরই ক্ষতি করে। আজ যে যুবক পড়াশোনা বন্ধ করে দিনমজুরের কাজ করছে, সঠিক সহায়তা পেলে সে হতে পারত একজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার। যে যুবক সামান্য পুঁজির অভাবে নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারছে না, সেও একদিন উদ্যোক্তা হয়ে বহু মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারত। এই অবহেলা একদিকে তাদের ব্যক্তিগত স্বপ্নকে চূর্ণ করে, অন্যদিকে জাতির সম্ভাবনাকেও বাধাগ্রস্ত করে।
তবু তারা থেমে থাকে না। অনেকেই ছোট ছোট কাজ করে নিজেদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখে। কেউ রাত জেগে পড়াশোনা করে, কেউবা অল্প আয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে বড় কিছুর জন্য। তাদের এই লড়াই যেন মরুভূমির বুকে এক ফোঁটা বৃষ্টি—দুর্বল হলেও আশার প্রতীক।
কিন্তু সমাজ কি তাদের জন্য যথেষ্ট করছে? আজকের যুবকেরা জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের প্রতিভা বিকাশের জন্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, এবং আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। তাদের অবহেলার মানে শুধু তাদের স্বপ্ন নষ্ট করা নয়; এটি জাতির সম্ভাবনার অপচয়।
যদি আমরা তাদের পাশে দাঁড়াই, তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিই, তবে তারা শুধু নিজেদের নয়, পুরো সমাজের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। টাকার অভাবকে যদি পেছনে ফেলে তাদের স্বপ্ন পূরণের পথ তৈরি করা যায়, তবে একদিন এই যুবকেরাই আমাদের জাতির গর্ব হয়ে উঠবে। তাদের হাত ধরেই সমাজের এক নতুন সকাল আসবে।